দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক শুরু হয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত এই বৈঠকে তারা এমন একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে যা দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শি’র সাথে বৈঠক সফল হওয়ার আশা করছেন। তিনি বলেছেন, উভয়পক্ষের ’সম্পর্ক সবসময়ই ভালো’।
তিনি আরো বলেন, চীনের সাথে একটি চুক্তি ‘হতে পারে’। আজ কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের আশা করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হতেও পারে। আমাদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া আছে।’
এদিকে শি বলেন, ট্রাম্পের সাথে ‘দেখা হওয়াটা দারুন’। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর থেকে তিনি তার সাথে তিনবার ফোনে কথা বলেছেন এবং চিঠি বিনিময় করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের দুটি শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির মধ্যে মাঝে মাঝে দ্বন্দ্ব হওয়া স্বাভাবিক। উভয় দেশেরই সঠিক পথে থাকা উচিত।’
এই দুই নেতার শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকাতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময়। অর্থাৎ ছয় বছর পর তারা আবারো মুখোমুখি হয়েছেন এমন এক সময়ে, যখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন করে মাত্রা পেয়েছে।
আজকের বৈঠকে তিনটি বিষয়- শুল্ক, বিরল খনিজ ও এআই চিপস এবং টিকটক আলোচনার বিষয়বস্তুতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সবথেকে জটিল বিষয়টি শুল্ক। ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, ফেন্টানাইল তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানের রফতানি বন্ধে চীন সহযোগিতা করলে তিনি তাদের উপর আরোপ করা শুল্ক কমাবেন।
এদিকে এনভিডিয়ার মতো কোম্পানিগুলো তাদের উন্নত চিপস চীনের কাছে বিক্রি করতে চায় বলে ট্রাম্প চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বেইজিং সামরিক ব্যবহারের জন্য উচ্চমানের চিপস ব্যবহার করতে পারে।
এরপরেই রয়েছে বিরল খনিজ, যা চীনের চূড়ান্ত দর কষাকষির কৌশল। চীন বিশ্বের ৯০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ পরিশোধন করে এবং গত কয়েক মাসে এর সরবরাহ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিরল খনিজ খাতে চীনের আধিপত্য ভাঙতে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলো প্রচুর বিনিয়োগ করলেও ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে আসবে না।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছিলেন, ট্রাম্প ও শি’র মধ্যে বৈঠকের সময় একজন মার্কিন ক্রেতার কাছে টিকটক বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হতে পারে। তবে বিক্রয়ের শর্তাবলী সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটি চূড়ান্ত হলে ট্রাম্পের জন্য আরেকটি বড় জয় হবে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার, ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক, চিফ অফ স্টাফ সুসি ওয়াইলস এবং চীনের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড পারডু অংশ নিয়েছেন।
অন্যদিকে চীনের পক্ষ থেকে শি’র সাথে রয়েছেন চিফ অফ স্টাফ কাই কি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওক্সু, উপ-প্রধানমন্ত্রী হি লাইফেং, বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও এবং জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ঝেং শানজি।
সূত্র : বিবিসি



