কেনিয়ার আম্বোসেলির ঢালু পাহাড়ের উপর দিয়ে যখন ভোরের আলো দেখা যায়, তখন মাঠের উপর দিয়ে একটি মৃদু শব্দ ভেসে আসে। এটি কোনো ট্রাক্টর বা জেনারেটরের শব্দ নয় বরং ড্রোনের শব্দ।
এখানে মানুষ ও হাতির মধ্যে বহু পুরনো সংগ্রাম ছিল। কিন্তু এই ছোট যন্ত্রগুলো এখন তাদের শক্তিশালী বন্ধু হয়ে উঠছে।
কেনিয়ার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চলের সীমান্তে বসবাসকারী কৃষকরা বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছে হাতিগুলো তাদের ভুট্টা, শিম ও টমেটো ক্ষেতের উপর দিয়ে খাবার ও পানির সন্ধানে বেরিয়ে আসে।
রাতে চলাচলকারী পশুগুলো প্রায়ই ধ্বংস করে দেয় জমির বেড়া ও ফসল।
কৃষক জোয়েল মুলিঙ্গা তার টমেটো ক্ষেতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘হাতি আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’।
‘তারা কয়েক মিনিটের মধ্যেই সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এখন আমাদের কাছে ড্রোন রয়েছে। এটি তাদের নিয়ন্ত্রণের একটি দ্রুত ও নিরাপদ উপায়। এটি ব্যবহার করে পুরো খামারকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।’
কাজিয়াডো ও আম্বোসেলিসহ দক্ষিণ কেনিয়ার কিছু অংশ জুড়ে মুলিঙ্গার মতো কৃষকরা বন্যপ্রাণীর সাথে সংঘাত কমাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
বিগ লাইফ ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দিন-রাত হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ড্রোনের ব্যবহার করছে।
এই যন্ত্রগুলো তাপ সংকেতের মাধ্যমে, পশুপাল এগিয়ে এলে আশেপাশের অঞ্চলের লোকদের সতর্ক করে, এতে ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
বিগ লাইফ ফাউন্ডেশনের একজন বন্যপ্রাণী কর্মকর্তা ও ড্রোন পাইলট করপোরেশন ডেভিড এনটিনিনা বলেন, ‘এই পদ্ধতি তাদের কাজকে অনেকটা বদলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ড্রোন তাদের অনেক সাহায্য করছে। এটি হাতিদের ঠিক উপরে উড়ে যায়। এতে আলো ও একটি শব্দের ব্যবহার রয়েছে, যা তারা অপছন্দ করে। তাই তারা সংরক্ষিত অঞ্চলে ফিরে যায়। এটি টর্চ বা যানবাহনের চেয়ে নিরাপদ কারণ সেখানে আপনার কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’
এনটিনিনা ও রেঞ্জারের টহল গাড়ি রাতে ইনফ্রারেড ফিডের মাধ্যমে সাদা ও ধূসর রঙের ছানাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে।
সাভানার শীতল অন্ধকারের মধ্যে প্রতিটি হাতিকে উজ্জ্বল চলমান মূর্তির মতো মনে হয়।
যখন হাতিরপাল খামারের সীমানার কাছে আসে, তখন তাদের উপরে ড্রোন চালানো হয়। ড্রোনের মৃদু আলো ও শব্দ পেয়ে প্রাণীগুলো ধীরে ধীরে সংরক্ষণ অঞ্চলের দিকে ফিরে যায়।
দিনের বেলায় ড্রোনের মাধ্যমে রঙিন ও পরিষ্কার আকাশের ছবি দেখা যায়। যার ফলে হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়।
আগে রেঞ্জাররা হাতিদের ভয় দেখানোর জন্য ট্রাক, স্পটলাইট ও ফাঁকা গুলি চালাতো। এর ফলে উত্তেজনার সৃষ্টি হতো। যা প্রাণী ও মানুষ উভয়েরই ক্ষতিকর ছিল।
ড্রোনের সাহায্যে কয়েক মিনিটের মধ্যেই অপারেটররা হাতিদের নিরাপদে খামার থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে।
এই মেশিনগুলো জিপিএস-কলারযুক্ত হাতির সাথেও সংযুক্ত। এর মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং করা যায়।
সূত্র : আনাদোলু অ্যাজেন্সি
 


