ওয়াশিংটনে হামলা: যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন কার্যক্রম স্থগিত

ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের অভিবাসীদের আশ্রয় সংক্রান্ত আবেদনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলি করেন আফগানিস্তানের এক অভিবাসী। এরমধ্যে এক সেনা মারা গেছেন। ওই গুলির ঘটনার জেরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

নয়া দিগন্ত অনলাইন

ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের অভিবাসীদের আশ্রয় সংক্রান্ত আবেদনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলি করেন আফগানিস্তানের এক অভিবাসী। এরমধ্যে এক সেনা মারা গেছেন। ওই গুলির ঘটনার জেরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এরআগে তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসী নেয়া বন্ধের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আশ্রয় সংক্রান্ত (অ্যাসাইলাম) আবেদন কার্যক্রম বন্ধের ব্যাপারে ইউএস সিটিজেন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের (ইউএসসিআইএস) পরিচালক জোসেফ এডলো শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) এক্সে লিখেছেন, “সব বিদেশির সম্পর্কে নিরাপত্তা যাচাই সর্বোচ্চ পর্যন্ত নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয় সিদ্ধান্তের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।”

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইউএসসিআইএসের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদনের ব্যাপারে যেন কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়। এটি বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।

তবে আবেদন যাচাই বাচাইয়ের কাজ তারা চালিয়ে যেতে পারবেন। শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে কর্মকর্তাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই অভিবাসনে লাগাম টানার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। তার প্রশাসন অনেক অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এরসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার আইনও বাতিলের চেষ্টা করছেন তিনি।

সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অধীনস্থ ইউএসসিআইএস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— কোনো দেশেরই অ্যাসাইলাম আবেদন অনুমোদন, বাতিল বা বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্তই তারা এখন দেবেন না। তবে কর্মকর্তারা আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগের ধাপ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন। নির্দেশনায় বলা হয়, ‘সিদ্ধান্তের ঠিক আগের ধাপে এসে থেমে যান ও অপেক্ষা করুন।’

অবশ্য সব ধরনের আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ও ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয় নিয়ে এখনো তেমন বিশদ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ট্রাম্প কোন কোন দেশকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে চান, তা স্পষ্ট করেননি। এমন সিদ্ধান্ত আইনি প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে এবং ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এর সমালোচনা করেছে।

এদিকে বুধবারের প্রাণঘাতী হামলার পর অভিবাসন নীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আরও কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত মিলছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের গণহারে ফেরত পাঠানো, শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমানো এবং মার্কিন ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছেন।

হামলার পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বিদেশির থাকার কথা নয়, তাদের সবাইকে দেশ ছাড়তে হবে’। একই দিনে নতুনভাবে নিরাপত্তা যাচাইয়ের পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আফগান নাগরিকদের সব ধরনের ইমিগ্রেশন আবেদন গ্রহণও স্থগিত করা হয়।

যদিও তৃতীয় বিশ্বের সব দেশের কথা বললেও ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে কোনো দেশের কথা উল্লেখ করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, তার এ সিদ্ধান্ত ব্যাপক আইনি বাধার মুখে পড়বে। এছাড়া এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা ও চাপের মুখেও পড়বেন তিনি। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।

এরপর বৃহস্পতিবার ইউএসসিআইএস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আসা ১৯ দেশের নাগরিকদের দেওয়া গ্রিন কার্ড পুনরায় যাচাই করা হবে। যদিও বুধবারের হামলার সেখানে বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। কোন কোন দেশ তালিকায় আছে জানতে চাইলে ইউএসসিআইএস হোয়াইট হাউসের জুন মাসের একটি ঘোষণার কথা জানায়— যেখানে আফগানিস্তান, কিউবা, হাইতি, ইরান, সোমালিয়া ও ভেনেজুয়েলার নাম ছিল। পুনরায় যাচাই কীভাবে হবে, সে বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্যও দেয়া হয়নি।

সূত্র: বিবিসি, সিবিএস