টাঙ্গাইলে জিআই স্বীকৃত রসালো ও মৌসুমি আনারসে ভরপুর বাজার। ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির রেশ দেখা গেছে।
বিগত বছরের চেয়ে এ বছর আনারসের দাম মোটামুটি ভালো। ভরা মৌসুমে আনারসে ভরে গেছে মধুপুরের বিভিন্ন হাট-বাজার। চাহিদা থাকায় চাষিরা ভালো লাভের আশা করছেন।
কৃষকরা জানায়, বাজারে আম ও অন্য ফলের আমদানি কমতে শুরু করেছে তাই আনারসের দাম ও চাহিদা আরো বাড়বে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান, বাংলাদেশের সুস্বাদু আনারস উৎপাদনের অন্যতম স্থান হলো টাঙ্গাইলের মধুপুর। এ বছর উপজেলায় ৬ হাজার ৩৩৮ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ করা হয়েছে। এক হেক্টর জমিতে ৩৮ টন ক্যালেন্ডার জাতের আনারস উৎপাদন হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২০০ হেক্টর বেশি।’

তিনি বলেন, ‘মধুপুরে তিন জাতের আনারসের চাষ করা হয়ে থাকে। জলডুগি, ক্যালেন্ডার ও এমডি টু। এ জাতগুলোর মধ্যে জলডুগি ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারসের চাহিদা বাজারে সবচেয়ে বেশি থাকে।’
উপজেলার বিখ্যাত আনারসের হাট গারোবাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে সারি সারি সাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা, ভ্যানগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি ভর্তি করে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কৃষকরা। অন্য বছরের তুলনায় বেচাবিক্রিও বেশি হচ্ছে।
মহিষমারা গ্রামের আনারস চাষি সাজ্জাদ রহমান জানান, তিনি এ বছর ১০ হাজার ক্যালেন্ডার জাতের আনারস সম্পূর্ণ অর্গানিকভাবে আবাদ করেছেন। যা এখনো পাকতে শুরু করেনি। এবার অন্য বছরের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি তাই লাভের মুখ দেখা যাবে বলে মনে করেন।’
কৃষকরা জানায়, ‘আনারসের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আনারস থেকে যে খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয় এমন কারখানা যদি সরকার বা শিল্প মালিকেরা মধুপুরে গড়ে তোলে তাহলে আমরা আরো লাভবান হতে পারব। আনারস নষ্ট হওয়া থেকেও রক্ষা করা যাবে।’
আশ্রা গ্রামের কৃষক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘আমি এবছর ৩৫ হাজার আনারস চারা লাগিয়েছি এর মাঝে ৩০ হাজার আনারস আসছে। প্রতিটা আনারস বাগান থেকে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে বিক্রি করেছি। এ বছর আনারসের দাম অনেকটা ভালো। যদি সার ও কিটনাশকের দাম কিছুটা কমে, আনারস বিক্রিতে আরেকটু বেশি লাভের আশা করা যেত।’
ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মিয়া জানান, ‘আমি প্রতিদিন গারোবাজার, আশ্রা বাজার থেকে দু’থেকে তিন হাজার আনারস বেচাকেনা করি। প্রতিটা আনারস আকার ভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে কিনে ঢাকা, রংপুর, মাধবপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই। গত বছরের চেয়ে এবছর দাম একটু বেশি। খরচ বাদে কিছুটা লাভ করা যায়।’

ইদিলপুর এলাকায় আনারস চাষি আক্তার হোসেন বলেন, ‘এবছর আনারসের আকার অনেক বড় হয়েছে। সারের দাম বেশি হওয়ায় আনারস উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। তাই আমরা পাইকারদের সীমিত লাভ হচ্ছে।’
গারোবাজারের নিরাপদ আনারস চাষি সমিতির সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বলেন, আনারস প্রতি বছরই চাষ করি। সার, কীটনাশকসহ যাবতীয় সকল কিছুর দাম বেশি হওয়ায় প্রতিটি আনারসে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অন্য বছর যে ফল ১৫ থেকে ২০টাকা বিক্রি করছি এ বছর ওই আনারস ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। এবছর আনারসের বাজার ভালো।’
ফলন ভালো হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা আনারস বিক্রি করার জন্য পাইকারি বাজারে আসছেন। কিন্তু দাম অন্য বছরের তুলনায় এবছর মোটামুটি একটু বেশি। মধুপুরের আনারস মূলত জলছত্র, গারোবাজার, ইদিলপুর, মোটের বাজার, আশ্রাবাজারসহ বিভিন্ন বাজার থেকে ক্রয় করে সারা দেশে সরবরাহ করে থাকে।’
আনারস চাষি ও ক্রেতারা জানায়, ‘মধুপুরের বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়ে থাকে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যথাযথ নির্দেশনা, পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে আনারস চাষে আরো ভালো করা যাবে।’