মুসলিমা খাতুন
পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক প্রাকৃতিক শক্তি হলো আগ্নেয়গিরি। কিছু প্রাণী এই ভয়ংকর পরিবেশেই খাপ খাইয়ে বেঁচে আছে। নিজেদের জন্য একটি ‘নিখুঁত গ্রহ’ গড়ে তুলেছে।
বিবিসি আর্থের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গিয়েছে।
এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল কিছু বন্যপ্রাণীর তালিকা দেয়া হলো:
লেসার ফ্লেমিঙ্গো (Phoenicoparrus minor)
তানজানিয়া রাস্ট্রের ওল ডোনিও লেঙ্গাই হলো আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি। এর উত্তরে বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত জলাশয় ন্যাট্রন হ্রদ অবস্থিত। তবুও হ্রদটি বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং দুই মিলিয়ন ছোট ফ্লেমিঙ্গোর মিলন ও প্রজননস্থল।

লেক ন্যাট্রনের পানির তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যায়। পানিতে সোডিয়াম কার্বনেট ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকায় এটি অত্যন্ত ক্ষারীয়। এই পরিস্থিতি ত্বক পুড়িয়ে দিতে পারে, যা বেশিরভাগ উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের জন্য এটিকে অযোগ্য করে তোলে। ফ্লেমিংগোদের শক্ত ত্বক এবং পায়ের আঁশ পোড়া প্রতিরোধ করে। তারা ফুটন্ত পানি পান করতে পারে। এছাড়া পানি থেকে লবণ অপসারণ করতে পারে।
এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে ছোট ফ্লেমিঙ্গোরা এই নরকময় স্থানটিকে স্বর্গে পরিণত করেছে। শিকারী মুক্ত থাকায়, ফ্লেমিঙ্গোরা শুষ্ক মৌসুমে লেকের ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে তাদের বাসা তৈরি করে। খাবারের জন্য খুব কম প্রতিযোগিতা থাকায় আগ্নেয়গিরির পানিতে খুব সহজেই খাদ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
গ্যালাপাগোস ল্যান্ড ইগুয়ানাস (Conolophus subcristatus)
ফার্নান্দিনা দ্বীপ হল গ্যালাপাগোস আগ্নেয়গিরির মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় এবং সবচেয়ে নির্মল। এটি সামুদ্রিক এবং স্থল ইগুয়ানা, উড়তে না পারা কর্মোরেন্ট, পেঙ্গুইন এবং সি লাওনের মতো বিরল প্রজাতির প্রাণীর আবাস্থল। প্রাণীগুলো এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয় এবং বসবাস করতে হয় তা শিখেছে।

আগ্নেয়গিরি থেকে আসা তাপের সুযোগ নেয় স্ত্রী স্থল ইগুয়ানারা। প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার ইগুয়ানা উপকূল থেকে লা কুম্ব্রে পর্বতের চূড়া থেকে নিচে নেমে আসে। সেখানে তারা নরম ও উষ্ণ ছাইতে ডিম পাড়ে। যা ডিম ফুটানোর জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা।
অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প এবং লাভা নিঃসরণ যেকোনো প্রজাতির জন্য বিপজ্জনক। বিশেষ করে যারা গর্তের ভিতরে বাসা বাঁধে তাদের জন্য বেশি বিপজ্জনক। তবে স্থল ইগুয়ানারা আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ অনুভব করতে পারে এবং নিরাপদে নেমে আসার সময় পায়।
ভ্যাম্পায়ার গ্রাউন্ড ফিঞ্চ (Geospiza septentrionalis)
গ্যালাপাগোসের আগ্নেয়গিরি দ্বীপ উলফ উষ্ণ এবং শুষ্ক। এখানে বসবাসকারী প্রাণীদের জন্য খাদ্য এবং পানি সীমিত। বলা হয়ে থাকে, খরার সময় ফিঞ্চের সংখ্যা ৯০% হ্রাস পেতে পারে।

তবে এই ফিঞ্চগুলো চালাক ও সৃজনশীল। তারা বেঁচে থাকার জন্য একটি স্বতন্ত্র আচরণ এবং বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে- ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়েছে! খাদ্য হিসেবে ক্যাকটাসের রস, মজ্জা ও পাখির ডিমের উপাদানসহ ভ্যাম্পায়ার ফিঞ্চ রক্তও পান করে।
‘শার্প-বিল্ড গ্রাউন্ড ফিঞ্চ’ উপপ্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ধারালো ঠোঁটের অধিকারী। ধারালো ঠোঁট দিয়ে বুবি সামুদ্রিক পাখিদের চামড়া ফুটো করে রক্ত পান করে। মজার ব্যাপার হলো, বুবি পাখিরা খুব একটা প্রতিরোধও করে না।
লেখক : নয়া দিগন্তের ইন্টার্ন শিক্ষার্থী।