বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

বর্ষা মানেই খালবিল ও নদীতে টলমলে পানি। আর গ্রাম বাংলার এক চিরচেনা দৃশ্য হয়ে উঠে কাঠের নৌকা। এই ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমটি শুধু যাতায়াতের উপায় নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবিকার সাথেও নিবিড়ভাবে জড়িত।

কাজী আফতাব হোসেন, নগরকান্দা (ফরিদপুর)

Location :

Nagarkanda
নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা
নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা |নয়া দিগন্ত

বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফরিদপুরের কারিগররা। বর্ষা মানেই খালবিল ও নদীতে টলমলে পানি। আর গ্রাম বাংলার এক চিরচেনা দৃশ্য হয়ে উঠে কাঠের নৌকা। এই ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমটি শুধু যাতায়াতের উপায় নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবিকার সাথেও নিবিড়ভাবে জড়িত।

নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও হাট-বাজারে এখন চলছে সেই কাঠের নৌকা তৈরির মৌসুম ব্যস্ততা। বর্ষা মৌসুমির শুরুতে নতুন নৌকা তৈরি ও পুরাতন নৌকা মেরামতের ব্যাপক চাহিদা থাকায় নৌকা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। গত কিছুদিন ধরে ফরিদপুরের নাগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে হাটবাজারে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।

স্থানীয়রা জানায়, সাধারণত ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ডিঙি নৌকা, বাইচের নৌকা তৈরি করা হচ্ছে। এরমধ্যে ডিঙি নৌকা বেশি তৈরি করা হচ্ছে। তবে অনেক কারিগর আছেন, যারা সারা বছর অলস সময় কাটান কিন্তু বর্ষা শুরুতে তাদের চাহিদা বেড়ে যায়।

এলাকার নৌকা তৈরির কারিগররা জানায়, নিচু এলাকার জনগণ নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন নৌকা মেরামতের জন্য তাদের কাছে ছুটে আসেন। এখন নৌকা তৈরি মেরামতের ভরা মৌসুম চলছে। তবে নৌকায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে।

পুড়াপাড়া এলাকার কাঠমিস্ত্রি সুশান্ত কুমার বলেন, ‘আমরা সারা বছর কাঠের বিভিন্ন কাজ করি। বর্ষা শুরুতে কিছু নৌকার কাজ আসে এতে আমাদের বাড়তি আয় হয়। তবে আগের তুলনায় নৌকার চাহিদা কমে গেছে।’

নগরকান্দা বাজারের কাছে একটি নৌকা তৈরির কারখানার কারিগর প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘তিনি ১৫ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত। তার কথায় বর্ষা আসার দেড়-দু’মাস আগে থেকেই আমাদের কাজ শুরু হয়। এখন তো কাজের চাপে খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করতে পারি না। একটি মাঝারি আকারের নৌকা তৈরি করতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। প্রতি মৌসুমে আমরা অন্তত ৫০ থেকে ৭০টি নৌকা তৈরি করতে পারি আমরা।’

পাশের আরেকটি কারখানার তরুণ কারিগর রফিক শেখ জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবন বদলালেও কাঠের নৌকার কদর কমেনি। এখানে কৃষক, জেলে এমনকি স্থানীয় দোকানদার পর্যন্ত বৃষ্টি মৌসুমে এই নৌকা ব্যবহার করেন। খালবিলে, বৃষ্টির পানি জমা রাস্তায় এটি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি কার্যকর মাধ্যম।

ব্যবসায়ী আব্দুর রফিক মিয়া জানান, বাজারে অনেকেই এখন টিনের বা ফাইবারের নৌকা ব্যবহার করছেন ঠিকই, কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও টেকসই ব্যবহারের জন্য আজো গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে কাঠের নৌকার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

কারখানার মালিক মো: জাহিদ বলেন, ‘বর্ষাকাল মানে আমাদের জন্য ঈদের মৌসুম। এই সময়ের আয়ে অনেকেই সারা বছরের খরচ চালায়।’

স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক নিরুপদ সাহা বলেন, নৌকা শুধু যানবাহনই নয় এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ।