পর্যটনের নতুন দিগন্ত

সরকারি রাজস্ব বাড়াতে পর্যটন খাতে যাচ্ছে কর্ণফুলী টানেলের অতিথিশালা

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী টানেল পেরিয়ে সহজেই সার্ভিস এরিয়া বা সৈকতে পৌঁছানো যাবে, যা বিদেশীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে।

মো: নূরুল কবির, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)

Location :

Anwara
কর্ণফুলী টানেলের অতিথিশালার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য
কর্ণফুলী টানেলের অতিথিশালার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য |নয়া দিগন্ত

সরকারি রাজস্ব বাড়াতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত ‘সাত তারকা’ মানের অতিথিশালা এবার ইজারা (লিজ) দিতে যাচ্ছে সেতু বিভাগ।

আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ৩০ বছরের জন্য পর্যটন খাতে এই সার্ভিস এরিয়াটি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ানোর আশা করছে সরকার।

কর্ণফুলী টানেলের অতিথিশালার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য

টানেলের পাশে পারকি সমুদ্রসৈকত ঘেঁষা প্রান্তে প্রায় ৭২ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই সার্ভিস এরিয়াটি মূল প্রকল্পের শুরুর পরিকল্পনায় ছিল না। পরে তা যুক্ত করে গড়ে তোলা হয় আধুনিক মানের অবকাঠামো। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকায় এটি হয়ে ওঠে সরকারি অপচয়ের প্রতীক।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সার্ভিস এরিয়ায় রয়েছে পাঁচ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয় কক্ষবিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাংলো, ৩০টি রেস্টহাউজ ও বিশ্রামাগার। আরো রয়েছে সম্মেলন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, জাদুঘর, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জিম, হেলিপ্যাড, টেনিস মাঠ, সুইমিংপুল, পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার স্টেশন ও দু’টি নান্দনিক সেতুসহ নানা স্থাপনা। রয়েছে বিশাল ক্ষমতার (১ হাজার ১৮২ টন) শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এই সার্ভিস এরিয়া নির্মাণে ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।

সেতু বিভাগ জানায়, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ১ জুলাই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যা জমা দেয়ার শেষ সময় ২৭ আগস্ট। নির্বাচিত ইজারাদার সব স্থাপনা ‘যেমন আছে’ ভিত্তিতে পাবেন এবং বার্ষিক ভাড়া পরিশোধ করবেন চার কিস্তিতে। রুম সার্ভিস, খাবার, স্পা, কনফারেন্স, ট্যুর প্রভৃতি সেবা চালু করে ইজারাদার মুনাফা করতে পারবেন এবং সেবামূল্য নির্ধারণে থাকবে স্বাধীনতা। তবে ইজারাদার যদি নতুন কোনো নির্মাণ বা কাঠামোগত পরিবর্তন করতে চান, তবে সেতু বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।

সার্ভিস এরিয়ার কাছে পারকি সমুদ্রসৈকত অনেক সম্ভাবনা নিয়েও অবকাঠামো, নিরাপত্তা ও সেবার অভাবে পিছিয়ে আছে। ১৩ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা থাকলেও ছয় বছরেও কাজ শেষ হয়নি। বিদেশী পর্যটকদের জন্য নেই মানসম্পন্ন সুবিধা। এমন প্রেক্ষাপটে আধুনিক এই সার্ভিস এরিয়া পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চালু হলে পারকিসৈকত ঘিরে পর্যটনে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কর্ণফুলী টানেলের অতিথিশালায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী টানেল পেরিয়ে সহজেই সার্ভিস এরিয়া বা সৈকতে পৌঁছানো যাবে, যা বিদেশীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে।

সরকার বলছে, টানেলের রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিদিন গড়ে ৩৭ লাখ টাকা খরচ হলেও আয় হচ্ছে মাত্র ১০ লাখ টাকার মতো। ফলে লোকসান কমিয়ে আয়ের পথ খুঁজতেই সার্ভিস এরিয়াকে বেসরকারি খাতে দেয়া হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’-এর চট্টগ্রাম সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরির আগে যৌক্তিকতা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মূল্যায়ন জরুরি। এই প্রকল্প থেকে সরকার ও জনগণের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’

সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘স্বচ্ছ দরপত্রের মাধ্যমে এই স্থাপনাগুলো হোটেল, মোটেল ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি জনগণও উন্নত সেবা পাবে।’

টানেল প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সার্ভিস এরিয়াকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচালনায় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে গেলে লোকসান কিছুটা পুষিয়ে আসবে বলে আশা করছি।’