রবিন সরকার রাব্বি
চলো, আজ আমার স্টোরি ক্লিকের ফটোগ্রাফি জীবনটা তোমাদের সাথে শেয়ার করি...
আমি রবিন সরকার রাব্বি, আমার ফটোগ্রাফি যাত্রা শুরু হয় এককভাবে।২০২১ সালের ৮ মে ক্যামেরা কিনি, শখের বসে টুকটাক ছবি তুলতাম, পরবর্তী সে ক্যামেরা দিয়ে একটি ওয়েডিং ভিডিও শুট করি, নিজ অভিজ্ঞতা খাটিয়ে কাজটি সম্পন্ন করি এবং সবাই পছন্দ করে। তারপর নিজের মাঝে অনুপ্রেরণা আসলো আমার হয়তো আগানো উচিত!
পরবর্তীতে আমার বিজনেস পার্টনার শাকিল-এর সাথে পরিচয় হলো, শাকিল ছিল আমার কলেজ বন্ধু,পরিচযয়ের মধ্যে দিয়ে জানতে পারি ওরও ডিভাইস আছে। ওরও শখের জিনিস ক্যামেরা। শাকিল আগে থেকেই টুকটাক কাজ করে। দুই বন্ধুর মতামত আলোচনা করে একটু একটু করে বিজনেস শুরু করি। যা আজ আপনারা এত বড় স্টোরি ক্লিক দেখছেন!
একটা চলিত কথা আছে জানেন?
১০ জন খারাপ বন্ধুর চেয়ে একজন ভালো শুভাকাঙ্ক্ষী অনেক ভালো।
২০২১ সালের পর আর আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তখন আমাদের কাছে ছিল না এত দামি ক্যামেরা। হাত খরচের টাকায় আমরা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ক্যামেরা কিনি। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমাদের সেটাপে ৩-৪ লাখ টাকার ডিভাইস আছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আমরা মোট ১২০০ প্লাস ইভেন্ট কভার করেছি একসাথে দুই বন্ধু। লাখো কোটি শুকরিয়া। এই হলো আমাদের শুরুর এক পথ চালনার গল্প,,,
ফটোগ্রাফি কি?
ফটোগ্রাফি হলো আলো ব্যবহার করে ছবি তোলার শিল্প, বিজ্ঞান এবং অনুশীলন, ফটোগ্রাফি ইলেকট্রনিকভাবে ইমেজ সেন্সের মাধ্যমে বা আলোক সংবেদনশীল ফিল্ম ব্যবহার করে ছবি তৈরি করে। প্রতিবছর ১৯ আগস্ট বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস পালিত হয়ে থাকে।
প্রশ্ন আসতে পারে ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার আছে তো?
আমি বলব হ্যাঁ অবশ্যই আছে।
প্রথমত কোনো কিছুই অপ্রয়োজনীয় না। পরিশ্রম আর কষ্ট করলে সফলতা আসবেই। যে কোনো কাজ হোক না কেন, বাট ক্লিক করলে ছবি তোলা হয়ে গেল বা টাকা এমনটা না, ভালো কাজ এবং ভালো সার্ভিস ক্যারিয়ার হতে বাধ্য।
আলহামদুলিল্লাহ এখন তো আমাদের কোম্পানি আছে, ভালো ইনকাম ও আমাদের আন্ডারে ৮ থেকে ১০ জন কাজ করে। এফোর্ট দিলে অবশ্যই ক্যারিয়ার বিল্ডআপ হবে, পরিশ্রমের ফল অবশ্যই মিষ্টি হয়।
এখন শুধু আমরা আমাদের এলাকা নয়। এলাকার বাইরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে থাকি। বাংলাদেশের টপ ইউনিভার্সিটি, ওয়েডিং, বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসগুলো কাজ করি, শুধু তাই নয় বিভিন্ন প্রমোশনাল ভিডিও বানাচ্ছি।
আমার ৪-৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলি...
একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে গেলে পিছনে অনেক অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়, একজন ধৈর্যবান ব্যক্তিত্বের ব্যক্তি হতে হয়।
একটা ফটো ক্লিক করার আগে ভাবতে হয় পছন্দ হবে কিনা?
ভাবতে হয় ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা। ভাবতে হয় কিভাবে উনাদের মনের মত সার্ভিস দেওয়া যায়, অনেক গল্প থাকে ছবি কিংবা ভিডিওর পিছনে। ৫-৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হয় কয়েক মিনিটের ভিডিওর জন্য।
ফটোগ্রাফি হলো জীবনের সাথে এক প্রেমের সম্পর্কের মতো। আমার কাছে ফটোগ্রাফি হলো দেখার বিষয় নয়, এটি অনুভূতি জীবনের সেরা জিনিসগুলো ক্যাপচার করা, যেখানে শব্দ ব্যর্থ হয় সেখানে ছবি কথা বলে। পৃথিবীটাকে দেখি ক্যামেরার চোখে,আমার ক্যামেরা শুধু একটি যন্ত্র নয় এটি আমার মনের প্রতিচ্ছবি, ক্যামেরার লেন্সে এক ফালি স্বপ্ন।
ফটোগ্রাফি কি শুধু আনন্দ,ঘোরাফেরা আসলেই কি তা??
সবচেয়ে কষ্টের ধৈর্যের কাজ হলো ফটোগ্রাফি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেটে পারফেক্ট ভিডিওর জন্য কতবার যে ভিডিও ক্লিক করতে হয় তা অগণিত, তিন বেলার খাবার টাইম করে খাইতে না পারা, এমনকি বিয়ের রাতে ২/৩টায় খাবার খাওয়া, ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যায় কাজের চাপে, মানসিকভাবে ক্লান্তি চলে আসে। শারীরিক অসুস্থতা আর না হয় নাই বলি। এমন কোনো সময় যায় যে ১০০০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার জার্নি করতে হয়, সকালে চট্টগ্রাম তো রাতে কুমিল্লা। শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে যদি একটি প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারি তাহলে এ ক্লান্তিটুকু আর থাকে না।
ফটোগ্রাফির পেশাটা স্বাধীন পেশা। যেটাতে একঘেয়ামি নাই । যেমন কর্পোরেট জগতে কিংবা অন্য কোনো পেশায় প্রতিদিনের একটা রুটিন থাকে ৮-৫টা অব্দি, কিন্তু সেটা ফটোগ্রাফি পেশায় নাই। নিজ ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করো।
মতামত, ভালো ফটোগ্রাফার হতে হলে বেশি করে ভ্রমণ করা, বিভিন্ন পরিবেশ এবং ঐতিহ্যকে ক্যামেরাবন্দী করা, নিয়মিত অনুশীলন ও চর্চা করা জরুরি।



