বাংলাফ্যাক্ট

ইন্টারনেটে আপত্তিকর কন্টেন্টের নিশানায় নারী রাজনীতিকরা

এসব বিষয় বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম ও লোগো সংবলিত নকল ফটোকার্ড।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
বাংলাফ্যাক্ট
বাংলাফ্যাক্ট |সংগৃহীত

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট শনাক্ত করেছে যে ইন্টারনেটে আপত্তিকর কন্টেন্টের নিশানায় নারী রাজনীতিকরা।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ‘কয়েক বছর ধরে ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব, টিকটক-সহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নারীদের নিয়ে আপত্তিকর কন্টেন্ট প্রচার একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি এর শিকার হওয়াদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সরকারে থাকা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের নারীরা।’

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর আলোচনায় আসা কয়েকজন নারী রাজনীতিককে জড়িয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ক্রমাগত ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব নারীর নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি, তাদের জড়িয়ে গণমাধ্যমের নামে ছড়ানো ভুয়া ফটোকার্ড, ভিন্ন ব্যক্তির সাথে কুরুচিপূর্ণ এডিটেড ছবি, আপত্তিকর ডিপফেইক ভিডিও, কুরুচিপূর্ণ বানোয়াট মন্তব্য যুক্ত করে ছবি, ভিডিও তৈরিসহ বিভিন্নভাবে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এসব বিষয় বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম ও লোগো সংবলিত নকল ফটোকার্ড।’

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট দেশের পাঁচজন উদীয়মান নারী রাজনীতিক, একজন প্রতিষ্ঠিত নারী রাজনীতিক এবং একজন নারী উপদেষ্টাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো ২৭টি আপত্তিকর কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যার সব দাবিই ভুয়া। এসবের বাইরেও উল্লিখিত নারীদের নিয়ে ইন্টারনেটে আপত্তিকর কন্টেন্ট প্রচার হয়ে থাকতে পারে, যা যাচাইয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে উঠে আসেনি। বিভিন্ন সময়ে দেশের অন্যান্য তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানও এসব কন্টেন্টকে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করেছে।

এর মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে নিয়ে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা পাঁচটি, যা মোট ভুয়া তথ্যের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানাকে নিয়ে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা ছয়টি, যা মোট ভুয়া তথ্যের ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে নিয়ে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা পাঁচটি, যা মোট ভুয়া তথ্যের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা সাতটি, যা মোট ভুয়া তথ্যের ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে নিয়ে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা দু’টি, যা মোট ভুয়া তথ্যের ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনকে নিয়ে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা একটি, যা মোট ভুয়া তথ্যের ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেবকে নিয়ে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা একটি, যা মোট ভুয়া তথ্যের ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো আপত্তিকর কন্টেন্টের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এছাড়াও ২৭টি আপত্তিকর কন্টেন্টের মধ্যে তিনটি (রুমিন ফারহানাকে নিয়ে ছড়ানো) কেবল জুলাই অভ্যুত্থানপূর্ব সময়ের, অন্যদের নিয়ে ছড়ানো বাকি সব কন্টেন্টই জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের বলে শনাক্ত করেছে বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়ায় দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট। সূত্র : বাসস