হাসিনার বিরুদ্ধে র্যাপ গানের মাধ্যমে অন্যরকম লড়াই জারি রেখেছেন এ বি এম নোমান আজাদ। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পটভূমিতে র্যাপারদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। মুহূর্তের মধ্যে ছাত্রদের উজ্জীবিত করে তুলতে গানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
র্যাপারদের অনেকে খেটেছেন জেল, হয়েছেন জুলুম নির্যাতনের শিকার। আবার কেউ কেউ জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে গান করে গেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন নোমান। একের পর এক প্রতিবাদী র্যাপ গান প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের অনুপ্রেরণা ও অদম্য শক্তি যোগাতে তিনি ছিলেন অনন্য।
জুলাই বিপ্লবে অনেক র্যাপারই তাদের র্যাপ গানের মাধ্যমে আন্দোলনে বাড়তি শক্তি যুগিয়েছেন। কিন্তু তাদের গানের ধারাবাহিকতা না থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নোমান। জুলাই ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিনি মোট পাঁচটি র্যাপ গান মুক্তি দিয়েছেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। একইসাথে আন্দোলনের ভাষাকে করেছে আরো শক্তিশালী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কোটা প্রথা বাতিল চেয়ে ‘কোটা আন্দোলন’ শিরোনামে একটি র্যাপ গান বের হয়। হাসিনা সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের যখন ঢালাওভাবে শিবির ট্যাগ দিতে থাকে তখন তিনি রিলিজ করেন ‘মেধাবীদের বাংলাদেশ’ নামে আরো একটি র্যাপ গান। এরপর ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা পালানোর পর রিলিজ হয় ‘শেখ হাসিনা পালাইছে’।
এছাড়া ইন্ডিয়ার পানি আগ্রাসন ও বাংলাদেশ নীতির সমালোচনা রিলিজ করেন ‘শত্রু আমগো কেডা?’ এবং সর্বশেষ রিলিজ হয় ‘সুশীল’ শিরোনামে আরো একটি র্যাপ গান। প্রত্যেকটি গানই ব্যাপক তথ্যসমৃদ্ধ। তার গানের ভিডিওগুলো ইতোমধ্যে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। অনলাইনেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে নোমানের র্যাপ গান।
গানের এ লড়াই নিয়ে নোমান বলেন, ‘আমার র্যাপ গানগুলো শুধু বিনোদনের জন্য নয়, প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই গানগুলো করা। আর প্রত্যেকটা গানেই মানুষ তার মনের কথাগুলো খুঁজে পাবে। যখন অন্যায় দেখেছি, তখনই গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি এবং করে যাব। এ কাজটাতে তিনি সমান ভাগ দিতে চান গানগুলোর কবি ও গীতিকার রাকিবুল এহসান মিনারকে।’
তিনি বলেন, ‘মিনারের সাথে আমার অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দু’জনের বোঝাপড়াটা অনেক ভাল এবং একে অপরকে বুঝতে পারি এবং দর্শক কী চায় সেটাও বুঝার চেষ্টা করি। এ সময় তিনি আরো স্মরণ করেন গানগুলোর ডিরেক্টর সাদ আল আমিন, সাউন্ড ডিজাইনার আমির হামজা খান এবং কবি সাইফ আলি খানকে।’
নোমান আরো বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময়টাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গানগুলো করেছি, বিশেষ করে ৪ আগস্টের কথাও যোগ করেন তিনি। ৪ আগস্ট ঢাকা যখন উত্তাল বিশেষ করে শাহবাগ–বাংলামোটর এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সাথে যুবলীগ, ছাত্রলীগ মিলে অস্ত্র হাতে ছাত্রদের উপর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করছিল, গুলিবর্ষণ করে ছাত্রদের হত্যা করছিল সেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া গুলিবর্ষণের মধ্যে তিনিও আটকে যান এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার মধ্য দিয়েই স্টুডিওতে গিয়ে গানগুলো রেকর্ড করেন।’
তিনি জানান, ‘গান প্রকাশের পর থেকেই তাকে দেশ-বিদেশ থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বিভিন্ন রকমের হুমকি, হত্যা ও গুম করে ফেলার ভয় দেখিয়ে অনেক ফোন এসেছে। অনেক ম্যাসেজ ও কমেন্ট এখনো তার ফেসবুক ও পেজের ইনবক্স ও কমেন্ট বক্সে বিদ্যমান আছে। এতো কিছুর পরও তিনি দমে যাননি।’
উল্লেখ্য, র্যাপার নোমান ছোট বেলা থেকেই মেলোডি গান করেন। র্যাপ গান করা শুরু করেন ২০২১ সাল থেকে। তিনি এর আগেও স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের নানা অসঙ্গতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে র্যাপ গান করেছেন। তার মধ্যে ‘সুখ চাই’ ‘বেসামাল’ ‘জং ধরা মনটা’ ‘এভাবে কী বাঁচা যায়’ ইত্যাদি। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগরে হিরাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। র্যাপ গান করার পাশাপাশি একজন নাট্যকার ও নির্দেশক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।