কোক স্টুডিও বাংলার নতুন গান ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’

কোক স্টুডিও বাংলার লক্ষ্যের সাথে মিল রেখে সুর, ছবি, পরিবেশনা এবং ভিজ্যুয়াল গল্প বলে ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ যেন সৃজনশীল পরিবেশনায় তুলে ধরেছে মানুষের চিরন্তন অনুভূতি।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
‘লং ডিসট্যান্স লাভ’র পোস্টার
‘লং ডিসট্যান্স লাভ’র পোস্টার |সংগৃহীত

মুক্তি পেলো কোক স্টুডিও বাংলা সিজন ৩-এর পঞ্চম গান ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’। এটি একটি রোমান্টিক ডুয়েট, যা এই ডিজিটাল যুগে দূরত্বের অনুভূতিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। গানটি পরিবেশন করেছেন উদীয়মান তারকা অংকন কুমার এবং শেখ মুমতাহিনা মেহজাবিন আফরিন, যিনি ‘মডার্নওটাকু’ নামেও পরিচিত।

গানটিতে সুর দিয়েছেন শুভেন্দু দাস শুভ। অংকন ও কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী গায়িকা-গীতিকার প্রাগাতা নাওহা মিলে লিখেছেন গানের কথা, যা গানটিতে যোগ করেছে আবেগ এবং প্রবাস জীবনের কঠিন বাস্তবতা।

আজকের সময়ে, যেখানে মুহূর্তের মধ্যে সাগর পাড়ি দেয়া যায় আর এক ক্লিকেই দূরত্ব ঘুচে যায়, তবুও মন কখনো কখনো শূন্য লাগে। কিছু কথা অজানাই থেকে যায়, নীরবতা ভারী হয়ে ওঠে, আর মাইলের পর মাইল দূরত্ব আরো দীর্ঘ মনে হয়। ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ সেই অপূরণীয় শূন্যতার গল্প, অপেক্ষার নীরব ব্যথা, দূরে থেকেও কাছাকাছি থাকার তিক্তমধুর অনুভূতি তুলে ধরে।

শুভেন্দুর হৃদয়স্পর্শী সুরে এই গান যেন বাতাসে ভেসে যাওয়া এক অপ্রেরিত চিঠি, যেখানে যেমন আছে আকাঙ্ক্ষা আর তেমনি আশা। গানটি স্মরণ করিয়ে দেয়—দূরত্ব সত্ত্বেও বেঁচে থাকে ভালোবাসা, ফিসফিস প্রেমের স্মৃতিতে, দূরের তারার মতো—যা ধরা যায় না, কিন্তু আবার মুছেও যায় না।

গানের কথায় উঠে এসেছে না-পাওয়া ফোন কল, নির্ঘুম রাত, আর ভেসে থাকা স্মৃতির ছবি। ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ সঙ্গীর অনুপস্থিতিকে সুরে বেঁধে এক আবেগঘন ভালোবাসার গল্প তৈরি করেছে। সুরকার শুভেন্দু সুরের সাথে আধুনিক সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। অংকনের মায়াবী কণ্ঠ ও আফরিনের আবেগী গায়কী মিলে এক গভীর প্রেমের গল্প সৃষ্টি হয়েছে।

গানটির ভিজ্যুয়ালেও আছে নতুনত্ব। প্রথমবারের মতো কোক স্টুডিও বাংলার গানে দেখা গেলো সাদা-কালো পরিবেশনা। রঙ সরিয়ে রেখে আবেগ, অনুভূতি ও আলোকছায়াকে সামনে আনা হয়েছে। অন্ধকার আর আলো মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভালোবাসা ও দূরত্বের দ্বৈত অনুভূতি, যা ভিডিওটিকে দিয়েছে চিরন্তন সিনেমাটিক আবহ।

গানের ভিডিওচিত্র নির্মাণ করেছে রানআউট প্রোডাকশনস এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন পরিচালক আদনান আল রাজীব। ভিডিওটি শুট করা হয়েছে এক পরিত্যক্ত গ্যালারিতে, যেখানে সমসাময়িক নৃত্যশিল্পীরা দূরত্বের যন্ত্রণা আর ভালোবাসার দৃঢ়তাকে নৃত্যে প্রকাশ করেছেন। সিনেম্যাটিক আলোতে প্রতীকী নাচের ভঙ্গিমা যেন বাড়িয়ে দিয়েছে অপেক্ষা আর ভালোবাসার আবেগ।

গানটির প্রধান শিল্পী অঙ্কন কুমার বলেন, ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ শুধু একটি ডুয়েট নয়, বরং এখানে কণ্ঠ আর আবেগের মিলন ঘটেছে। কোক স্টুডিও বাংলায় পরিবেশন করা এবং এত প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পীর সাথে কাজ করা সত্যিই আমার জন্য অনুপ্রেরণার। আমি বিশ্বাস করি, এই গানটি তাদের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত হবে যারা দূরে থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।’

মুমতাহিনা মেহজাবিন আফরিন বলেন, ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ গানটি গাওয়া যেন সেই অনুভূতিগুলোকে সরাসরি জীবনে অনুভব করার মতো ছিল। এটি এমন ভালোবাসার গল্প, যা দূরত্ব যতই ঝুঁকির মুখে ফেলে দিক, তা কখনো ভেঙে যায় না। আমি আশা করি শ্রোতারা সেই শক্তি ও কোমলতা অনুভব করতে পারবেন, যা আমরা গানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

সুরকার শুভেন্দু দাস শুভ বলেন, আমার জন্য এই গানটি ছিল নীরবতাকে সুরে প্রকাশ করার চেষ্টা। দূরত্বের ভালোবাসায় অনেক কথা বলা হয় না, আর আমি চেয়েছিলাম গান সেই অনুভূতি দেখাক, তবে আশার জায়গাও রাখুক। গল্পটি শুধু সুরে নয়, থেমে থাকা সময়েও বলা হচ্ছে।

কোক স্টুডিও বাংলার লক্ষ্যের সাথে মিল রেখে সুর, ছবি, পরিবেশনা এবং ভিজ্যুয়াল গল্প বলে ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ যেন সৃজনশীল পরিবেশনায় তুলে ধরেছে মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। গানটি কোক স্টুডিও বাংলার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং স্পটিফাইতে শুনতে পারবেন শ্রোতারা।