বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ‘লালনকন্যা’ খ্যাত ফরিদা পারভীন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন বলে বাসসকে জানিয়েছেন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী।
তার স্বামী ও চার সন্তান রয়েছেন।
বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও সংস্কৃতি, মৎস উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাগণ শোক প্রকাশ করেছেন।
ডা: আশীষ জানান, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। তাকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হতো। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের অংশ হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। তখন ডায়ালাইসিসের পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। এর পর থেকে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সঙ্গীতজীবন শুরু হয়। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে তাকে।
সঙ্গীত জীবনে তাকে পার হতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। নানা ধরনের গান করলেও শিল্পীজীবনে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা, অগণিত মানুষের ভালোবাসা মূলত লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। তাই তাকে ‘লালনকন্যা’ বলা হয়। যখন থেকে লালনের গান গাওয়া শুরু হয়েছিল, তারপর আর থেমে থাকেননি।
প্রধান উপদেষ্টার শোক
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধক নানা ধরনের গান করলেও শ্রোতাদের কাছে ফরিদা পারভীনের পরিচিতি ‘লালনকন্যা’ হিসেবে। পাঁচ দশক ধরে তার কণ্ঠে লালন সাঁইয়ের গান মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। তার গান আমাদের সংস্কৃতির অন্তর্লীন দর্শন ও জীবনবোধকেও নতুন মাত্রায় তুলে ধরেছিল।’
তিনি বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গান থেকে দূরে থাকেননি ফরিদা পারভীন। সঙ্গীতের প্রতি তার এই অনুরাগ প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
‘একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণী শিল্পী বাংলাদেশের সংগীত জগতে যে অবদান রেখেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নিত্যনতুন চিন্তা ও সৃষ্টির খোরাক জোগাবে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বিএনপির শোক
বিখ্যাত লালন সঙ্গীতের শিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে এ শোক প্রকাশ করেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
শোকবাণীতে বলা হয়েছে, ফরিদা পারভীন ছিলেন লালন সঙ্গীতের জীবন্ত কণ্ঠ। তার অসাধারণ কণ্ঠে লালন গীতি শুধু সঙ্গীতের মাধুর্য নয়, বরং মানবতা, সাম্য, ভালোবাসা ও সত্যের বাণী হয়ে মানুষের অন্তরে গভীরভাবে অনুরণিত হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে জাতি যে মহান গুণী শিল্পীকে হারালো তা আর পূর্ণ হওয়ার নয়।
শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদেরসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ভক্ত-শ্রোতাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা।