দু’ দিন আগে মৃত্যুর গুজব ছড়ালেও অবশেষে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বলিউডের ‘হি-ম্যান’ খ্যাত ধর্মেন্দ্র কেওয়াল কৃষণ দেওল। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি দেওল পরিবার।
তবে এশা দেওল ও হেমা মালিনীকে পবন হংস শ্মশানে দেখা গিয়েছে।
নভেম্বরের শুরুতে ধর্মেন্দ্রর অসুস্থতার খবরে বলিউউ তারকাদের ভিড় জমে দেওল পরিবারে। ১১ নভেম্বর অভিনেতার মৃত্যুর গুজব ছড়ালে দেওল পরিবার তা খারিজ করে।
ধর্মেন্দ্র ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার লুধিয়ানাতে (পাঞ্জাব) এক জাঠ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন স্কুলের হেডমাস্টার। পড়াশোনার প্রতি তেমন ঝোঁক না থাকলেও দিলীপ কুমার ও মতিলালের অভিনয় দেখে রূপালি পর্দার নায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ধর্মেন্দ্র।
আর্থিক অনটনের জেরে মাঠে-ঘাটে কাজ করেছেন সুদর্শন ধর্মেন্দ্র। কিন্তু আর্থিক সঙ্কট আটকে রাখতে পারেনি তার প্রতিভাকে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তার বিয়ে হয় প্রকাশ কৌরের সাথে। মূলত তাকে গ্রামে আটকে রাখতেই অল্প বয়সে বিয়ে দেয় তার পরিবার। কিন্তু তাতেও থেমে যায়নি তার স্বপ্ন।
স্বপ্নকে বাস্তব করতে ধর্মেন্দ্র ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ারের ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি পাঠান। সেই চিঠিই ভাগ্য বদলে দেয় তার। ডাক আসে মুম্বাই থেকে। নিজের ট্যালেন্টের ওপর ভর করেই ওই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ধর্মেন্দ্র।
প্রতিযোগিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘মেহবুব স্টুডিওতে প্রতিযোগিতার ফল বেরোনোর দিন চিন্তায় আমার গলা দিয়ে পানিও নামছিল না। আমার সাথে আরো অনেক প্রতিভাবান অভিনেতা অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারাও নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছিলেন।’
ওই প্রতিযোগিতার সুবাদে ‘বন্দিনী’ সিনেমার জন্য নির্বাচিত হন ধর্মেন্দ্র। ‘বন্দিনী’ ধর্মেন্দ্রের অভিনীত প্রথম সিনেমা হলেও তা রিলিজ হতে সময় লাগায় পরবর্তী কাজের জন্য প্রযোজকদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হত তাকে। হাতে টাকা না থাকায় হাল ছেড়ে এক সময় গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন।
পরে ১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ ছবির সাথে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন ধর্মেন্দ্র। যদিও ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। পরে ‘শোলা অউর শবনম’ (১৯৬১) ছবিটি সাফল্যের মুখ দেখলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
১৯৬৬ সালে ‘ফুল অউর পাত্থর’ ছবির সাথে তিনি বলিউডের এক নম্বর ‘অ্যাকশন হিরো’ হয়ে ওঠেন। এরপর একে একে জীবন মৃত্যু, ইয়াদো কি বারাত, চারাস, চুপকে চুপকে, সীতা অউর গীতা, শোলে, দোস্ত, আজাদ, ডি বার্নিং ট্রেন সিনেমায় কাজ করেন ধর্মেন্দ্র।
ব্যক্তিগত জীবনেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ধর্মেন্দ্রর। অভিনয় কেরিয়ার শুরুর আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। প্রকাশ কৌর ও ধর্মেন্দ্র দম্পতির চার সন্তান। দু’ পুত্র সানি ও ববি প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। মেয়ে বিজেতা ও অজিতা।
স্বপ্নসুন্দরী হেমা মালিনীর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন দু’জনে। তবে নিজের প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেননি ধর্মেন্দ্র। হেমা ও ধর্মেন্দ্রর দুই কন্যা-এষা ও অহনা।
রাজনীতির ময়দান থেকেও দূরে থাকেননি বলিউডের হি-ম্যান। ২০০৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির টিকিটে রাজস্থানের বিকানের থেকে নির্বাচনে জেতেন তিনি।
দেওলদের নিজস্ব প্রোডাকশন হাউসের ছাতায় দু’ ছেলে সানি ও ববির সাথে আপনে, ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানার মতো ছবি করেছেন ধর্মেন্দ্র। করণ জোহর পরিচালিত রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি ছবিতে ৮৭ বছর বয়সেও নজর কেড়েছিলেন।
শ্রীরাম রাঘবনের ইক্কিস সিনেমাতে শেষবার পর্দায় দেখা যাবে তাকে। ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে সিনেমাটি।হিন্দুস্তান টাইমস



