লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল উন্নয়নে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এপি মোলার মেয়ার্স্ক

এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প এবং এককভাবে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন

Location :

Chattogram
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক রচিত হয়েছে। ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস—এপি মোলার-মেয়ার্স্ক গ্রুপের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বাস্তবায়নে ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প এবং এককভাবে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এপিএম টার্মিনালস ও স্থানীয় অংশীদার কিউএনএস কনটেইনার সার্ভিসেস লিমিটেডকে লেটার অব অ্যাওয়ার্ড (এলওএ) হস্তান্তর করে এ প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। পিপিপি কর্তৃপক্ষ, এপিএম টার্মিনালস ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের উচ্চপর্যায়ের অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বখ্যাত এ.পি. মোলার-মেয়ার্স্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা এবং ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন এ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসেন।

৩০ বছরের কনসেশন চুক্তির আওতায় সম্পূর্ণ বেসরকারি বিনিয়োগে নির্মাণ, অর্থায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব নেবে এপিএম টার্মিনালস। এতে সরকারের কোনো ধরনের ঋণের দায় সৃষ্টি হবে না।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লকে রাসমুসেন ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মেয়ার্স্কের অংশীদারিত্ব দীর্ঘদিনের। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে এ বিনিয়োগ বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের আস্থার সুদৃঢ় প্রতীক।’

এপিএম টার্মিনালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিথ স্বেন্ডসেন বলেন, এই গ্রিনফিল্ড প্রকল্প স্থানীয় উৎপাদক, রফতানিকারক এবং আমদানিকারকদের কার্যক্রমে গতি আনবে এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মোনিরুজ্জামান বলেন, বন্দরকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করতে ধারণক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। লালদিয়া টার্মিনাল সেই প্রয়োজন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এ প্রকল্প বড় জাহাজ ভিড়ানো ও রফতানি কার্যক্রমকে আরো নির্ভরযোগ্য করবে। অভিজ্ঞ অপারেটর হিসেবে মেয়ার্স্ক বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে সক্ষম হবে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্প প্রমাণ করে যে দেশের পিপিপি এখন বাস্তবায়নের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেনসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্পের মূল সুবিধা

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল হবে দেশের প্রথম গ্রিন ও স্মার্ট পোর্ট, যেখানে দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ভিড়ানো ও ২৪ ঘণ্টা নাইট ন্যাভিগেশন সুবিধা থাকবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে— বছরে আট লক্ষাধিক টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং যোগ হবে (৪৪% বৃদ্ধি), সরকারের রাজস্ব ও সিপিএ’র আয় বাড়বে, ৫০০-৭০০ জন সরাসরি কর্মসংস্থান এবং কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে, আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের এইএসএসই নীতিমালা প্রয়োগ হবে, পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং রফতানি প্রতিযোগিতা বাড়বে, সবুজ, জলবায়ু-সহনশীল বন্দর অবকাঠামো গড়ে উঠবে পাশাপাশি পিপিপি খাতে আন্তর্জাতিক আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে।

সূত্র : বাসস