ঢাকায় শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী সারাদেশের এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা ও নারী-উদ্যোক্তাদের ক্রেতা-বিক্রেতা মেলা। তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ স্থাপন এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্যের বহুমুখী যোগানদাতা খুঁজে পেতে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় আজ সোমবার থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মেলন চলবে।
দুই দিনের ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মেলনে ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, বগুড়া, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা, যশোর, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, রাঙ্গামাটি ও জামালপুরের চামড়া, হালকা প্রকৌশল, তাঁত, হোসিয়ারি ফ্যাশন ও হোম টেক্সটাইল, নকশিকাঁথা, কাঠ ও বাঁশ-বেত, মৃৎশিল্প ও জুয়েলারি খাতের ২৫টি এসএমই ক্লাস্টার ও নারী-উদ্যোক্তাদের ৪৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সরবরাহ সক্ষমতা বাণিজ্যিক ক্রেতা, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করবেন।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো: মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: নূরুজ্জামান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র ভাইস চেয়ারম্যান মো: আব্দুর রহিম খান, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিয়র অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল, চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আবিদা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা খান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইনোভিশন কনসাল্টিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: রুবাইয়াৎ সরওয়ার।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো: মুসফিকুর রহমান বলেন, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে একটি স্টাডির মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৭৭টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করা হয় যেখানে সংশ্লিষ্ট মোট কর্মী ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এরমধ্যে পুরুষ ও নারী কর্মী যথাক্রমে ৭৪ শতাংশ ও ২৬ শতাংশ। ৫১টি জেলায় ছড়িয়ে থাকা ১৭৭টি ক্লাস্টারের প্রায় ৭০ হাজার প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক টার্নওভার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে নতুন আরো ২০টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিহ্নিত ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হ্যান্ডলুম, নকশিকাঁথা, ক্ষুদ্র গার্মেন্টস, হ্যান্ডিক্রাফটস, ফার্নিচার, বাঁশ-বেত, জুয়েলারি, চামড়াজাত পণ্য ক্লাস্টার উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা প্রধানত পণ্য বাজারজাতকরণ, যথাযথ অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত এবং উদ্যোক্তা সক্ষমতা, পণ্যের মানোন্নয়ন, কাজের পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এসএমই ক্লাস্টারসমূহে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিন সংযুক্তি, নতুন ডিজাইন ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, গুনগত মানোন্নয়ন প্রশিক্ষণ, কাঁচামাল পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন, শিল্পপণ্য ঘোষণা ও পণ্যের জিআই প্রাপ্তিতে পলিসি অ্যাডভোকেসি, ক্লাস্টারভিত্তিক ঋণ সরবরাহ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, আইসিটি সাপোর্ট, কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপনসহ নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্লাস্টারসমূহ উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্লাস্টারসমূহের উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ করে প্রয়োজনের ভিত্তিতে ক্লাস্টারগুলোতে কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। ইতোমধ্যে ৯৫টি ক্লাস্টারে উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে এবং ফাউন্ডেশন ৪০টি ক্লাস্টারে প্রতিনিয়ত নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কার্যক্রম এবং প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিভিন্ন ক্লাস্টারের প্রায় ২৮০০ জন উদ্যোক্তার মধ্যে প্রায় ১৮৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
ব্যাংকিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ১০ জন নারী-উদ্যোক্তা জুরি বোর্ডের সামনে স্বীয় ব্যবসায়িক উদ্যোগ উপস্থাপন করবেন। নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী প্রতিযোগীদের উপস্থাপনা ও সার্বিক বিষয় মূল্যায়নপূর্বক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন ২০২৫-এর শেষ দিন পুরস্কার প্রদান করা হবে।