বিদেশ যাওয়ার সুযোগ এখন বাংলাদেশীদের কাছে যেন সোনার হরিণ, যা ধরতে চায় সবাই। এর পেছনে রয়েছে পরিবারের স্বপ্ন পূরণের আশা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অর্জনের চেষ্টা এবং একটি উন্নত জীবনের প্রত্যাশা। চাকরি ও জীবিকার সন্ধানেই বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবছর লাখ লাখ বাংলাদেশী কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে প্রায় ৩৯ শতাংশ অভিবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২০ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশীর বিদেশে যাওয়ার গড় ব্যয় ছিল ৪.১৭ লাখ টাকা, যা সময়ের সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে। এই বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিদেশে পৌঁছেও অনেক প্রবাসীকে প্রতিদিন খরচের হিসাব করে চলতে হয়, কারণ বেশিরভাগ দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি। ফলে খাবার, বাসস্থান কিংবা যাতায়াত সব কিছুর জন্য খরচের হিসাব কষে চলতে গিয়ে প্রবাসীদের একাংশ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হন। অনেকের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, ওষুধ কেনা কিংবা হাসপাতালে সিরিয়াল পাওয়া একপ্রকার বিলাসিতা হয়ে ওঠে।

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে কাজ করে আসছে আমি প্রবাসী অ্যাপ। এটি মূলত প্রবাসীদের জন্য একটি ওয়ান-স্টপ সল্যুশন প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সরকারি ও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন সহজেই। সম্প্রতি অ্যাপটিতে যুক্ত হয়েছে একটি নতুন ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফিচার “প্রবাসী হেলথ কেয়ার”। এই ফিচারের মাধ্যমে প্রবাসীরা ঘরে বসেই মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ভিডিও কলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাচ্ছে। নামমাত্র খরচে অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে পুরুষ ও মহিলা ডাক্তার, শিশু ও নারী বিশেষজ্ঞ, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিস্ট, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞসহ নানান বিভাগের চিকিৎসা সেবা।
ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তার বাছাই করতে পারে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত আছেন। প্রতিটি চিকিৎসকের প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায় তার অভিজ্ঞতার বছর, ইউজার রিভিউ, অ্যাপয়েন্টমেন্ট সময়সূচি, রেটিং ও বিএমডিসি নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য। অ্যাপটিতে অনলাইন প্রেসক্রিপশনের সুবিধাও রয়েছে। শুধু প্রবাসীই নয়, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকও চাইলে অ্যাপটি ব্যবহার করে যেকোনো সময় চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারে।
বৈদেশিক রেমিট্যান্স নির্ভর এই দেশে প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা শুধু একটি মানবিক দায়িত্বই নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম পূর্বশর্ত। “আমি প্রবাসী” অ্যাপের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগগুলো প্রবাসীদের জীবনকে সহজ করছে, বিশেষ করে যখন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া তাদের জন্য হয়ে পড়ে কঠিন। এ ধরনের ডিজিটাল উদ্ভাবন প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর এক বাস্তব ও কার্যকর উদাহরণ।