বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ফাইন্যান্স (বিআইআইএফ) ও ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পিএলসি (এনসিসিবি পিএলসি) এর যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী ‘প্রফেশনাল সার্টিফিকেট ইন ইসলামিক ব্যাংকিং (পিসিআইবি)’ প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্ত হয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলে বিআইআইএফ ট্রেনিং হলে এ প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বিআইআইএফ’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন এনসিসি ব্যাংক পিএলসি’র ইভিপি ও ইসলামিক ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এ কিউ এম সাফিউল্লাহ আরিফ।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন লন্ডনের ইসলামিক ব্যাংকিং ও বীমা ইনস্টিটিউট’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলী কাইয়ুম।
আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর আফতাব উদ্দিন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএফ’র সহকারী অধ্যাপক ও একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ড. কে এম জাকির হোসেন সেলিম এবং সঞ্চালনা করেন বিআইআইএফ’র সহকারী পরিচালক মো: গোলাম মর্তুজা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। শুধু সুদমুক্ত ব্যাংকিং এর কারণে নয়, ইসলামী ব্যাংকিং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও প্রশংসিত হচ্ছে। এ খাতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদের বিদ্যমান ঘাটতি দূরীকরণে বিআইআইএফ’র এই প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি খুবই সময়োপযুগী উদ্যোগ। যদি আমরা টেকসই উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিত থেকে ইসলামী ব্যাংকিংকে দেখি তাহলে দেখব ভালো ঋণ গ্রহিতা ও ভালো ঋণ দাতাই কেবল এটিকে দীর্ঘমেয়াদী সুফল নিশ্চিত পারে। সুদমুক্ত ব্যাংকিং শুধু মুসলমানের জন্য নয়, এটি শুধু ধর্মীয় ব্যাপার নয়- দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থিক গতিশীলতা তৈরিতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী ব্যাংক পরিচালনায় কেবল মুনাফা অর্জন নয়, প্রয়োজন কমিটমেন্ট, ডেডিকেশন এবং ইসলামী অর্থনীতির যথার্থ জ্ঞান। ইসলামী ব্যাংকিং খাতে আরো মনোযোগ দেয়ার সময় এখনই। বিআইআইএফ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে বলে আমি আশা করছি।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)-এর মহাপরিচালক ও বিআইআইএফ’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. এম. আবদুল আজিজ বলেন, ‘বিআইআইএফ একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিং, ফাইন্যান্স ও ব্যবসা পেশাজীবীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করছে। জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে বিশ্বমানের পূর্ণাঙ্গ মানবসম্পদ তৈরির উদ্দেশ্যে পলিসি রিসার্চসহ বিভিন্ন গবেষণা, প্রকাশনা, প্রশিক্ষণ ও কনসালটেন্সি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিআইআইএফ’র প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সাথে রয়েছে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও রিসোর্চ সেন্টার। একাডেমিয়ার সাথে ফাইন্যান্স ইন্ডাস্ট্রির সমন্বয় সাধন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে ইসলামী ব্যাংকিং খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে পারলে ৯২ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে ইসলামিক ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স খাতের আরো অগ্রগতির অপরিমেয় সুযোগ রয়েছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনসিসি ব্যাংক পিএলসি’র ইভিপি ও ইসলামিক ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এ কিউ এম সাফিউল্লাহ আরিফ বলেন, ‘দেশে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যেহেতু সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ধর্মবিরোধী, তাই প্রফিট-লস-শেয়ারিং পদ্ধতির ইসলামী ব্যাংকিং এই দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এনসিসি ব্যাংক নিজেদের মানবসম্পদকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এরই অংশ হিসেবে বিআইআইএফ এর মাধ্যমে এনসিসি ব্যাংকের ৩৫ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্য থেকে নাসরিন আফরিন জুমা ও মো: সোহেল পারভেজ বিআইআইএফ-এ গবেষণা, প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরের লক্ষ্যে যে প্রশিক্ষণের যথার্থ উদ্যোগ নিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রসার ও আধুনিক প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্য এই প্রশিক্ষণ খুবই মূল্যবান। ইসলামী ব্যাংকিং সংক্রান্ত অনেক ভুল ধারণা দূর হয়েছে এবং সুধারণা তৈরি হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে এমন রিসোর্চফুল ট্রেনিং সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান তথা সকল ক্ষেত্রে সুদমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছি।’
উল্লেখ্য, প্রশিক্ষণ কোর্সটিতে ইসলামী অর্থনীতি, শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং কাঠামো, শরিয়াহ চুক্তি, ইসলামিক মানি মার্কেট, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কসহ ২৪টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন দেশের বিশিষ্ট ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স (আইআইবিআই), যুক্তরাজ্য কর্তৃক স্বীকৃত প্রাপ্ত। এটি ইসলামী ব্যাংকিং পেশাজীবীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।