সম্প্রতি সরকারি গুদামে ধান ও চালের মজুত ২০ লাখ ৫০ হাজার টন ছাড়িয়েছে। খাদ্যশস্যের এই মজুতকে স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চালের সর্বোচ্চ সংগ্রহ হতে পারে বলে আশা করছে সরকার।
খাদ্য অধিদফতর জানিয়েছে, চলমান বোরো মৌসুমে ১৫ লাখ টনের বেশি ধান ও চাল সংগ্রহ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ১৫ আগস্ট থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হলে বাজারে চালের দামে স্বস্তি আসবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য আবেদনও আহ্বান করেছে সরকার।
কর্মকর্তারা জানান, বোরো সংগ্রহ চলমান থাকায় মজুত আরো বাড়বে। তবে মজুত আর খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ সরকারি গুদামের খাদ্যশস্য ধারণের সক্ষমতা সাড়ে ২২ লাখ টনের মতো।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার তার মজুত ব্যবহার করে থাকে। খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ করে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সরকারের হাতে যত বেশি মজুত থাকবে, সরকার তত বেশি সফলভাবে বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
আর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান, চাল ও গম সংগ্রহ এবং বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে সরকার তার মজুত গড়ে তোলে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অংশটি করা হয় বোরো মৌসুমে। এ ছাড়া সরকারের বোরো সংগ্রহ কর্মসূচিও চলছে।
বোরো ধান ও চাল কেনা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। অন্যান্য বছর বার বার সময় বাড়িয়েও যেখানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না, এবার সেখানে এক মাস বাকি থাকতেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাছাকাছি চলে এসেছে।
খাদ্য অধিদফতরের ২৭ জুলাইয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি মজুতে চাল রয়েছে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টন, ধান ১ লাখ ২৪ হাজার টন এবং গম রয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার টন।
সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাহিদা অনুযায়ী ধান-চাল কিনতে পারলে আমদানি-নির্ভরতা অনেকটাই কমে যায়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়।
অন্যদিকে, বাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়ে স্থির হয়ে আছে। আগস্টের মাঝামাঝি চালু হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এরপর চালের দাম কমতির দিকে যাবে বলে আশা করছেন খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
খাদ্য অধিদফতর মহাপরিচালক মো: আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরা ভালো একটা মজুত গড়ে তুলেছি। বোরোতে আমরা ১৪ লাখ টনের বেশি সংগ্রহ করব।’
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে ৪ লাখ টন চাল আমদানির জন্য সরকারের অনুমোদন নিয়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মহাপরিচালক আরো জানান, ১৫ আগস্ট থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হবে। এই কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা দরে ৫৫ লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। কর্মসূচিটি চলবে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। তখন চালের বাজার আবার কমতির দিকে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বোরোর পর আমন পর্যন্ত যে সময়, এ সময়ে দামটা একটু বাড়ে। এখন বাজারে আমরা তো ক্রেতা, বোরো সংগ্রহ চলছে। সবকিছু মিলিয়েই চালের দামটা একটু বেড়ে থেমে আছে। আশা করি আগস্টের মাঝামাঝি থেকে দাম কমবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মজুত সাড়ে ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত কখনো এ সীমায় পৌঁছায়নি। বোরো সংগ্রহ চলছে, আরো ২ লাখ টন চাল আসবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বোরো সংগ্রহের ক্ষেত্রেও রেকর্ড করছি আমরা। ইতোমধ্যে সোয়া ১৪ লাখ টনের বেশি বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি আরো বাড়বে।’
বোরোতে রেকর্ড সংগ্রহের পথে সরকার
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে ৩৫ হাজার টন ধান, ১৪ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ধানের সংগ্রহ মূল্য ৩৬ টাকা ও চাল ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া এই সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই অতিরিক্ত ২৬ হাজার ৯৪২ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। সিদ্ধ চাল সংগ্রহও লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ১১ লাখ টনের বেশি সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল ও ১৫ হাজার টন আতপ চাল অতিরিক্ত সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি, যদিও চাল সংগ্রহ কিছুটা ভালো ছিল। এবার সেই ধারা ভেঙে সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির আবেদন আহ্বান
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৩ জুলাই এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আগ্রহী আমদানিকারকদের আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সরাসরি কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
সরকারের ধারণা, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ সফল হলে আমদানির প্রয়োজন কমবে, ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
বাজারে সরকারের শক্তিশালী মজুত ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কারণে চালের দাম ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
সূত্র : ইউএনবি



