দেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা

৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে ইউরোপ গেল কার্গো ফ্লাইট

সিলেটবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন : উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন

এমজেএইচ জামিল, সিলেট ব্যুরো

Location :

Sylhet
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, ইনসেটে কার্গো বিমান
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, ইনসেটে কার্গো বিমান

অবশেষে স্বপ পূরণে কালের নতুন স্বাক্ষী হলো সিলেট। শেষ পর্যন্ত সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বিমানে করে ছেড়ে গেলো বহুল প্রতিক্ষিত কার্গো ফ্লাইট। এর মাধ্যমে ইউরোপে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সিলেট তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে যোগ হয়েছে নতুন অধ্যায়।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে স্পেনের উদ্দেশ্যে উড়াল দিয়েছে এয়ারবাস ৩৩৭ মডেলের বাংলাদেশ বিমানের কার্গো ফ্লাইট।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কার্গো ফ্লাইট চালুর নেপথ্যে কারিগর মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। এছাড়া বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দসহ সিলেটের রাজনৈতিক সামাজিক অঙ্গনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

রোববার সন্ধ্যায় সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বাশির উদ্দিন বলেন, সাফল্য কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি যাত্রা।

আমরা আজকে যে সাফল্য অর্জন করলাম, এটি কোনোভাবেই গন্তব্য নয়, এটি একটি যাত্রা। ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেক দায় আমাদের নিতে হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমাদের সর্বক্ষেত্রে সক্ষমতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে অন্যদেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন এখন তার থেকে অনেক কম খরচে দেশ থেকে কার্গো করতে পারবেন। আজকের এই কার্গোযাত্রার ফলে ঢাকা থেকে ইউরোপে কার্গো পরিবহন ব্যয় কমেছে ১৩ শতাংশ। ফ্যাসিস্ট আমলের সৃষ্ট সমস্যাগুলো সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকায় আমরা সমাধান করতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর আজই প্রথম ঢাকার বাহিরে থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এটি সিলেটবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়া নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ম্যাক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ।

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি ছিল একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের। সিলেটবাসী এই দাবি নিয়ে হরতাল পর্যন্ত করেছেন। সিলেটবাসী দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকে কার্গো ফ্লাইটের যে যাত্রা শুরু হলো এটি অব্যাহত থাকলে সিলেটবাসী উপকৃত হবেন। সিলেটে উন্নয়নের নামে যে কর্মযজ্ঞ হয়েছিল তাতে লুটপাটে মহোৎসব হয়েছে। বর্তমান সরকার সেই লুটপাটের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই। একসময় এই মালামালগুলো অন্যদেশে গিয়ে এই বিমানের কার্গো হতো। কিন্তু এখন আর অন্যদেশে যেতে হবে না, আমরা নিজেদের দেশ থেকেই কার্গো করব। আমি আশা করি আপাতত সিলেট থেকে সপ্তাহে অন্তত ২টি কার্গো ফ্লাইট হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান বলেন, সিলেটবাসীর দাবি ছিল বিশ্বের সব দেশে সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু করার। এটি আজ বাস্তাবায়ন হলো। সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ার ফলে ঢাকার উপর চাপ কমে যাবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, এফবিসিসিআই'র সাবেক পরিচালক খন্দকার শিপার আহমদ, যমুনা ওয়েল লিঃ এর পরিচালক সালেহ আহমদ খছরু, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী ও এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ প্রমূখ।

সভাপতির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূইয়া বলেন, আজ দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলো।

এর মাধ্যমে দেশের রাপ্তানিখাতে যুগান্তকারী উন্নতি হবে। আপাতত সিলেট থেকে সপ্তাহে দুটি কার্গো ফ্লাইট যাবে। আমরা ধীরে ধীরে এটি আরো বাড়াবো ইনশাআল্লাহ।

এর আগে- প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। কার্গো ফ্লাইট চালুর জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারসহ সবধরনের প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ছেড়ে যাওয়া ১ম কার্গো ফ্লাইটে শুধু গার্মেন্টস পণ্য বহন করা হয়েছে। এতে কোনো যাত্রী ছিলনা। কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ায় ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানিতে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের জন্য নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বলে মনে করেন সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।