:
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে গভর্নর বলেন, বিদেশে থাকা সম্পদ উদ্ধারের প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল হলেও পাচারকৃত অর্থের উৎস চিহ্নিতকরণ এবং আইনি প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনতে সাধারণত ন্যূনতম চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার বাস্তবতা এটাই।’
ড. মনসুর জানান, ইতোমধ্যে বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। তিনি বলেন, অবিলম্বে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হলেও কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতায় লন্ডনের একটি মামলার কথা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মামলাটি চ্যালেঞ্জ করেননি এবং ইতোমধ্যে হেরে গেছেন।
এর ফলে ইসলামী ব্যাংকের দাবি করা অর্থের একটি অংশ বাংলাদেশ ফিরে পেতে পারে। তিনি বলেন, ‘কিছু টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সম্ভাব্য সময় জানতে পারব এবং তা ফেব্রুয়ারির আগে অথবা বছরের শেষের দিকে হতে পারে।’
ড. মনসুর আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মামলাগুলোতে আপিল হচ্ছে একটি সুযোগ যা উদ্ধার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘এগুলো আইনি প্রক্রিয়া, এখানে কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই।’
অন্য এক প্রসঙ্গে, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এস আলমের শুরু করা সালিশি কার্যক্রম সম্পর্কে গভর্নর বলেন, এ পদক্ষেপ ভিত্তিহীন এবং বাংলাদেশ জোরালোভাবে এ মামলা মোকাবেলা করবে।
এস আলমের বিদেশী নাগরিকত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ড. মনসুর বলেন, ‘আমাদের কাছে সুস্পষ্ট ও পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে যে, তিনি একজন বাংলাদেশী নাগরিক। এটি বাংলাদেশের আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন যে, এস আলম একটি বাংলাদেশী ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা বাংলাদেশী নাগরিকত্ব ছাড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি আমানতকারীদের সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দিকেও নজর দিচ্ছে।
ড. মনসুর জানান, ইসলামী ব্যাংকসহ সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা যাতে সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পেতে পারেন, সেজন্য একটি কম্পিউটার-ভিত্তিক সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এই স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও দক্ষতার সাথে তহবিল স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। আমরা চাই, কোনো আমানতকারী যেন বঞ্চিত না হন।’
তিনি আরো জানান, এই সিস্টেমটি চালু করতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
গভর্নর জোর দিয়ে বলেন, পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার, অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিদেশের মাটিতে আইনি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, টেকসই আইনি প্রচেষ্টা অবশেষে ফলাফল বয়ে আনবে।
ড. মনসুর বলেন, ‘সম্পদ উদ্ধার একটি দীর্ঘ পথ, তবে আমরা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’ বাসস



