ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সাথে বিজিএমইএ সভাপতির সাক্ষাৎ

সাক্ষাৎকালে তারা তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ, ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্যাবলী, এনবিআর সংক্রান্ত বিষয়, শিল্পে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য করণীয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে ফটোসেশন
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে ফটোসেশন |নয়া দিগন্ত

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএ এর একটি প্রতিনিধিদল পোশাক শিল্পে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের অনুরোধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

সাক্ষাৎকালে তারা তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ, ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্যাবলী, এনবিআর সংক্রান্ত বিষয়, শিল্পে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য করণীয়, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা উন্নয়ন, ট্রেড লাইসেন্সসহ ইআরসি, আইআরসি এবং অন্যান্য লাইসেন্স নবায়নে জটিলতা দূরীকরণ ও অন্তত ৫ বছর মেয়াদী করা, রাজউক কর্তৃক ড্যাপের আওতায় ইতোপূর্বে নির্মিত কারখানাগুলোর হয়রানি শিকার হওয়া এবং আরো নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৯ মাস থেকে কমিয়ে ৩ মাস করা হয়েছে। অনেক সময়ে আর্থিক কারণে উদ্যোক্তা এই সময়ের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৬ মাসে উন্নীত করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, এটি করা হলে ৫০০-৬০০ পোশাক কারখানা ক্লাসিফায়েড ঋণ থেকে রক্ষা পাবে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, বিশেষ নগদ সহায়তা ১% থেকে কমিয়ে ০.৩০% এবং বিকল্প নগদ সহায়তা ৪% থেকে কমিয়ে ১.৫% করা হয়েছে। নগদ সহায়তা হার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক ও সময়োপযোগী নয় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। শিল্প ও দেশের স্বার্থে নগদ সহায়তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি।

বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা পোশাক শিল্পে ১% হারে কর্তনকৃত উৎসে করকে বছর শেষে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করেন।

আলোচনায় তারা বলেন, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কীমটি বর্তমানে বন্ধ আছে। তারা এই স্কিমটি আবার চালু করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এটি উদ্যোক্তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যোগানে সহায়তা করবে।

তারা উদ্যোক্তাদের সহায়তায় রপ্তানির বিপরীতে একটি ফোর্সড তহবিল গঠনেরও প্রস্তাবনা দেন, যেখান থেকে সংকটের সময়ে সংশ্লিষ্ট কারখানা শ্রমিকদের বেতন প্রদান ও অন্যান সমস্যা সমাধান করতে পারবে।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, পোশাক শিল্পের রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে কাস্টমস সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলোর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে যেয়ে শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোতেও অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব হয়। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে লিড টাইম কমিয়ে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়াগুলোকে সহজীকরণ, দ্রুততর ও হয়রানিমুক্ত করা অপরিহার্য। সিদ্ধান্ত হয় যে, এনবিআর এর দক্ষতা বাড়ানো, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব করার জন্য বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা দেয়া হবে।

বৈঠকে বলা হয় যে তীব্র গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানাগুলোতে। বিজিএমইএ সভাপতি গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ভোলায় আবিষ্কৃত বিপুল মজুদের নতুন গ্যাস কূপগুলো থেকে অবিলম্বে গ্যাস উত্তোলন করে তা জাতীয় গ্রিডে নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। শিল্পে গ্যাসের চাহিদা পূরণে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয়।

বৈঠকে সভায় বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল বলেন যে, পোশাক শিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার অপরিহার্য। তারা প্রস্তাবনা দিয়ে বলেন, পিপিপি ভিত্তিতে সরকারের খাস জমি এবং খাল-বিলগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে স্থাপন করা হলে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে।

বৈঠকে বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ বলেন, গাজীপুর আশুলিয়ায় পোশাক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সরকার জমি বরাদ্দ দিলে পোশাক উদ্যোক্তারা ওইসব জমিতে শ্রমিকদের জন্য পর্যায়ক্রমে হাসপাতাল, আবাসন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।

বিজিএমইএ নেতারা মুন্সিগঞ্জে বন্ধ হয়ে যাওয়া গার্মেন্ট পল্লী স্থাপন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং চট্রগ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোর জন্য একটি সমন্বিত শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে জমি বরাদ্দ দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সহযোগিতা কামনা করেন।

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলের বক্তব্যগুলো নোট করে বলেন, সরকার পোশাক শিল্প সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত আছে এবং এ শিল্পকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদান করে যাবে।

আজ আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত এই সাক্ষাতে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সহ-সভাপতি (অর্থ)মিজানুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী এবং সদস্য মোঃ কামাল উদ্দিন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ড. মোস্তফা আবিদ খান, এসএসজিপি,কম্পোনেন্ট ম্যানেজার-১; ড. মো: রেজাউল বাসার সিদ্দিকী, কম্পোনেন্ট ম্যানেজার-২ এসএসজিপি; নেছার আহমদ, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এক্সপার্ট, এসএসজিপি; আবুল কালাম আজাদ, যুগ্মসচিব এবং মেহেদী মোশাররাফ ভুইয়া, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট।