ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা বাতিল করেছে ভারত। থিঙ্ক ট্যাংক বলছে, এটা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৯ জুন জারি করা সংশ্লিষ্ট সার্কুলারটি বাতিল করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছিল।
নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৯৯৪ সালের সাধারণ শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্যের অবাধ ট্রানজিটের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাধ্য সব সদস্য রাষ্ট্র।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু নেপাল ও ভুটানে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, তাই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করাটা এই চুক্তির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হতে পারে।
ভারতের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মুহাম্মদ ইউনূস তার সাম্প্রতিক চীন সফরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ‘স্থলবেষ্টিত’ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চল, যাকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ বলা হয়, সেটি একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। ফলে এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে, যা চীনা অর্থনীতির জন্য সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।’
ইউনূস বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলের ‘মূল সামুদ্রিক প্রবেশদ্বার’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকাকে ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায় তিনি চীনের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা বাংলাদেশে তাদের অর্থনৈতিক উপস্থিতি আরো গভীর করে।
ইউনূসের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকে সমালোচনা করে বলেন, ‘সহযোগিতা একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত, চেরি-পিকিং নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের রয়েছে প্রায় ৬,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা। ভারতের সীমান্ত কেবল পাঁচটি বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের সাথেই নয়, বরং তাদের অধিকাংশকের সাথেই আমরা সংযুক্ত। আর ভারতীয় উপমহাদেশ ও আসিয়ান অঞ্চলের মধ্যে সংযোগের একটি বড় অংশও সংযুক্ত। বিশেষ করে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিমসটেক-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে, যেখানে রয়েছে অসংখ্য সড়ক, রেলপথ, জলপথ, বিদ্যুৎ গ্রিড ও পাইপলাইন।’
এই সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ভূরাজনীতি, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা ও কৌশলগত প্রভাবের একটি জটিল দ্বন্দ্ব ধরা পড়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যের যে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তার পরিণতি সরাসরি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের মতো একটি কার্যকরী পদক্ষেপে রূপ নিয়েছে- যা দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে।
এদিকে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘২০২০ সালে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এর ফলে আমাদের বিমানবন্দর এবং অন্য বন্দরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র জট তৈরি হয়েছিল।’
‘এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল এবং বন্দরে আটকে পড়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ছিল। সেজন্য ২০২৫ সালের আটই এপ্রিল থেকে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে,’ বলেন জয়সওয়াল।
তবে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল হলেও নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি আগের মতোই চলবে বলে জানিয়েছে ভারত।
‘ভারতীয় ভূখণ্ড দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের যে পণ্য রফতানি হয়, এই পদক্ষেপ সেটার উপর প্রভাব ফেলবে না,’ বলেছেন জয়সওয়াল।
ভারতে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন
ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা বাতিল করেছে ভারত। থিঙ্ক ট্যাংক বলছে, এটা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৯ জুন জারি করা সংশ্লিষ্ট সার্কুলারটি বাতিল করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছিল।
নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৯৯৪ সালের সাধারণ শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্যের অবাধ ট্রানজিটের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাধ্য সব সদস্য রাষ্ট্র।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু নেপাল ও ভুটানে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, তাই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করাটা এই চুক্তির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হতে পারে।
ভারতের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মুহাম্মদ ইউনূস তার সাম্প্রতিক চীন সফরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ‘স্থলবেষ্টিত’ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চল, যাকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ বলা হয়, সেটি একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। ফলে এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে, যা চীনা অর্থনীতির জন্য সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।’
ইউনূস বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলের ‘মূল সামুদ্রিক প্রবেশদ্বার’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকাকে ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায় তিনি চীনের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা বাংলাদেশে তাদের অর্থনৈতিক উপস্থিতি আরো গভীর করে।
ইউনূসের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকে সমালোচনা করে বলেন, ‘সহযোগিতা একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত, চেরি-পিকিং নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের রয়েছে প্রায় ৬,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা। ভারতের সীমান্ত কেবল পাঁচটি বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের সাথেই নয়, বরং তাদের অধিকাংশকের সাথেই আমরা সংযুক্ত। আর ভারতীয় উপমহাদেশ ও আসিয়ান অঞ্চলের মধ্যে সংযোগের একটি বড় অংশও সংযুক্ত। বিশেষ করে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিমসটেক-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে, যেখানে রয়েছে অসংখ্য সড়ক, রেলপথ, জলপথ, বিদ্যুৎ গ্রিড ও পাইপলাইন।’
এই সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ভূরাজনীতি, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা ও কৌশলগত প্রভাবের একটি জটিল দ্বন্দ্ব ধরা পড়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যের যে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তার পরিণতি সরাসরি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের মতো একটি কার্যকরী পদক্ষেপে রূপ নিয়েছে- যা দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে।
এদিকে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘২০২০ সালে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এর ফলে আমাদের বিমানবন্দর এবং অন্য বন্দরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র জট তৈরি হয়েছিল।’
‘এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল এবং বন্দরে আটকে পড়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ছিল। সেজন্য ২০২৫ সালের আটই এপ্রিল থেকে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে,’ বলেন জয়সওয়াল।
তবে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল হলেও নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি আগের মতোই চলবে বলে জানিয়েছে ভারত।
‘ভারতীয় ভূখণ্ড দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের যে পণ্য রফতানি হয়, এই পদক্ষেপ সেটার উপর প্রভাব ফেলবে না,’ বলেছেন জয়সওয়াল।