নানা শঙ্কা কাটিয়ে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী শনিবার (৯ আগস্ট)।
অর্ধযুগ তথা ছয় বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত ড্যাবের এবারের কাউন্সিলে সদ্য সাবেক সভাপতি ডা: হারুন-ডা: শাকিল এবং সাবেক সভাপতি ডা: আজিজ-ডা: শাকুরের নেতৃত্বে পৃথক প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্যাবের এবারের শীর্ষ পাঁচটি পদের বিপরীতে দু’টি প্যানেলের মোট ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। উভয় প্যানেলই নির্বাচনী ইশতেহারে ফ্যাসিবাদমুক্ত ড্যাব গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা সারাদেশে পরিচিতি সভা ও ভোটের জমজমাট প্রচারণা শেষ করেছেন। নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীর অলিগলিতে থাকা হাসপাতাল ঘিরে ফেস্টুন-ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ, সাবেক পিজি) জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকদের ব্যাপক সমাগমের মাধ্যমে হারুন-শাকিল প্যানেলে পরিচিতি সভা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়েছে।
অন্যদিকে, আজিজ-শাকুর প্যানেলও বুধবার (৬ আগস্ট) বিএমইউ’র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে পরিচিতি ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী ড্যাব পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা। সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ড্যাবের কাউন্সিলের ভোটগ্রহণ হবে। প্রায় ৩১৩১ জন ভোটার উৎসবমুখর পরিবেশে ড্যাবের কাউন্সিলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ মে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশীদ সভাপতি এবং ডা: মো: আব্দুস সালাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেইসাথে হারুন-সালামের নেতৃত্বাধীন প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয়ী হয়। ২০২৪ সালের ২৫ মে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ২৪ মার্চ পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার কথা জানায় বিএনপি। পাশাপাশি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য ১২ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি ও কাউন্সিল পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে ড্যাবের সম্মেলন আয়োজনের কথা বলা হলেও নানা কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। এখন বেশকিছু প্রক্রিয়া শেষ করে কাউন্সিল অনুষ্ঠানে সকল প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
উল্লেখ্য, ড্যাবের ২৭১ সদস্যের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশিদ। মহাসচিব ছিলেন ডা: মো: আব্দুস সালাম। এছাড়া কোষাধ্যক্ষ পদে ডা: মো: জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সভাপতি পদে ডা: মো: আবদুস সেলিম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডা: মো: মেহেদী হাসান।
জানা যায়, গত ২৫ জুলাই ড্যাবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল মোতাবেক সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এখন ভোট গ্রহণের পালা। আগামী শনিবার (৯ আগস্ট) বেলা ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোট গ্রহণ হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্যাবের সম্মেলন সফল হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য পেশাজীবী এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে। এবারো ড্যাবের পাঁচটি শীর্ষ পদের জন্য ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে হারুন-শাকিল পরিষদের প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশিদ, মহাসচিব পদে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা: জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: আবুল কেনান, কোষাধ্যক্ষ পদে ড্যাবের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদ ডা: মো: মেহেদী হাসান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে অথপোডিক সার্জারি অধ্যাপক ডা: এ কে এম খালেকুজ্জামান দিপু। এছাড়া আজিজ-শাকুর পরিষদের প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: এ কে এম আজিজুল হক, মহাসচিব পদে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজের রেসপিরেটরি বিভাগের অধ্যাপক ডা: আব্দুস শাকুর খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে বিএমইউর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ডা: সাইফ উদ্দিন নিসার আহমেদ তুষান, কোষাধক্ষ্য পদে ইউরোলজিস্ট ডা: তৌহিদ উল ইসলাম জন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে বিএমইউ’র উপরেজিস্ট্রার ডা: আবু মো: আহসান ফিরোজ।
ড্যাবের কাউন্সিলে ভোটগ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার বলেন, ‘ড্যাবের কাউন্সিলে ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ৯ আগস্ট উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। এবারের কাউন্সিলে ড্যাবের প্রায় তিন হাজার ১৫০ জনের (কম-বেশি) মতো কাউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ যেকোনো মূল্যে একটি সুন্দর কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ড্যাবের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হবে। আমরা সেদিকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।’
ড্যাবের এবারের কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশিদ বলেন, ‘বিএনপির দুঃসময়ে আমরা চিকিৎসকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের দায়িত্ব গ্রহণ করি (হারুন-সালাম কমিটি)। যেসময় মহামারি করোনায় বিশ্ব বিপর্যস্ত ছিল, সে সময় দায়িত্ব নিয়েই ড্যাব নেতারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে প্রতিটি কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি করোনাভাইরাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় মাঠে নিরলসভাবে সক্রিয় ছিলাম। প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ড্যাবের উদ্যোগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, ত্রাণ ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। ৯ আগস্ট ড্যাবের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা কাউন্সিল উপলক্ষে মতবিনিয়সভা ও পরিচিতি পর্ব শেষ করেছি।’
জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আশা করি, ড্যাবের নেতাকর্মী ও ভোটাররা আমাদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করলে গণতান্ত্রিক চর্চা বিকশিত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। কাউন্সিলে প্রকৃত নেতাদের মূল্যায়নের সুযোগ থাকে। জয়ী এবং পরাজিত প্যানেলের লোকজন মিলেমিশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যায়। এই চর্চা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সর্বত্র অব্যাহত রাখলে দলের লাভ হবে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে বিএমইউ’র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আজিজ-শাকুর প্যানেলের পরিচিত পর্ব সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ সময় কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি ও কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির কাছে সরবরাহ করা সদ্য বিলুপ্ত কমিটির তালিকায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি পাঁচ দফা অঙ্গীকার সম্বলিত ইশতিহারও ঘোষণা করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে ড্যাব নেতারা বলেন, ‘আগামী ৯ আগস্ট ড্যাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের এই প্রক্রিয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, এই প্রক্রিয়া সংগঠনের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চাকে আরো উৎসাহিত করবে। তারা বিএনপির ৩১ দফার আলোকে স্বাস্থ্যখাতে স্বনির্ভরতা অর্জন, সবার জন্য স্বাস্থ্য ও সার্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।’
জানতে চাইলে আজিজ-শাকুর প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা: এ কে এম আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা আট দিনে প্রায় নব্বইভাগ নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ করেছি। দিনে চার থেকে পাঁচটি মেডিক্যালে সভা করেছি। বহুদিন পর একটি কাউন্সিল হতে যাচ্ছে, আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ইনশাআল্লাহ।’