বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির এবং ঢাকা-৮ আসনে মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। আগামীতে জামায়াত আপনাদের ভোট এবং আল্লাহর রহমতে সরকার গঠন করলে সব ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) মতিঝিল উত্তর থানার উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. হেলাল আরো বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিন ঢাকা-৮ আসন। এখানে ৯টি প্রশাসনিক ওয়ার্ড ওয়েছে। কিন্তু এ ওয়ার্ডগুলোতে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। মানুষের স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা ধরণের সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গত ১৫ বছরে জামায়াতের ওপর নানা ধরণের অন্যায়, অত্যচার, খুন এবং ফাঁসির মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যেও আমাদের সামাজিক কর্মকান্ড চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের মেডিকেল ক্যাম্প। আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে এটি আরো বড় আকারে পরিচালনা করা হবে। দেশের যে কোনো দুর্যোগের সময় (অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, বন্যায়) মানুষের পাশে ছুটে যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আমরা ক্ষমতায় যেতে পারলে জনগণের করের টাকায় গড়ে ওঠা দেশীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই সর্বস্তরের জন্য উন্নত করে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াত কেবল রাজনীতির জন্য রাজনীতি করে না। মানবিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য মানবিক সংগঠন দরকার, আর জামায়াত সে ভূমিকা রাখছে দীর্ঘদিন ধরে। অতীতে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা সবাই ক্ষমতার রাজনীতি করেছে, কিন্তু জামায়াত মানবতার রাজনীতি করে দুর্যোগ-দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই যার পরিচয়।’
জামায়াতে ইসলামীর ৪ দফা ভিত্তিতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়— তার একটি হলো সমাজ সংস্কার ও সমাজসেবা। এই ভিত্তিতেই দলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্যা-দুর্যোগ, নদীভাঙন, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই কার্যক্রম দল, মত, ধর্ম, বর্ণ বা জাতি নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত। এটাই জামায়াতকে আলাদা করে।’
স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী এলাকার মধ্যেই রয়েছে পিজি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সেখানে মানুষ সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা পায় না। ফলে আমাদের দেশ থেকে অনেকেই বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু জামায়াত সরকার গঠন করলে এসব হাসপাতালকে বিশ্বমানের হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে। যাতে বিদেশ থেকেও মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে জামায়াতে দুইজন মন্ত্রী তিনটি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমরা ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেশেই পাবে ‘
জামায়াতের এই নেতা আরো যোগ করেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে যেসব দল ক্ষমতায় এসেছে, তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে সাধারণ মানুষ আজও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ জামায়াত ক্ষমতায় না থেকেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।’
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শোষিত-বঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, যুবকদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া, উদ্যোক্তা তৈরিতে সুদবিহীন কর্জে হাসানা চালু করা, শিক্ষা সহায়তা দেওয়া, নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন—এসবই জামায়াতের সামাজিক সেবা কার্যক্রমের অংশ।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জামায়াত কখনো ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে রাজনীতি ব্যবহার করেনি, করবেও না। আমরা দলমত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সমাজসেবা চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাব। বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ড. হেলাল স্থানীয় জনগণকে আহ্বান জানান ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াতের নেতৃত্বে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।’
মতিঝিল উত্তর থানা আমির এস এম শামছুল বারীর সভাপতিত্বে ও থানা সেক্রেটারি রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে স্থানীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
মতিঝিল উত্তর থানা আমির এস এম শামছুল বারী বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছোট পরিসরে আজ এ আয়োজন করেছে। আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে বড় আকারে সেবা পাবেন মানুষ। আপনারা দেখেছেন, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ১০০ টাকার সেবা মাত্র ১০ ভাগ পান মানুষ। আমরা সরকার গঠন করলে মানুষ ১০০ টাকার শতভাগ সেবাই পাবেন।’



