দুনিয়ায় সার্বিক শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদেরকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান ও বিশ্বনবী সা:-এর আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান।
তিনি শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনে কাফরুল থানা উত্তর জামায়াত আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির মাগরিবের নামাজ আদায় করেন বায়তুল এহতেরাম মসজিদে এবং উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে কথা বলেন। এরপর স্থানীয় একটি মিলনায়তনে উপস্থিত সুধীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মিলিত হন। তিনি এশার নামাজ আদায় করেন মিরপুর ১৪ নম্বরের জামিউল উলুম মসজিদে এবং সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
থানা আমির রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মাহফুজুর রহমান ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম। উপস্থিত ছিলেন কাফরুল জোন জামায়াতের সহকারী পরিচালক মো: শহিদুল্লাহ, মিরপুর পূর্ব থানা আমির শাহ আলম তুহিন ও জোন টিম সদস্য জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ও শাশ্বত জীবনবিধান। মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে ইসলামে। তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামকে যথাযথভাবে ও পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। ইসলাম সুবিধামতো মানা বা প্রত্যাখানের কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খণ্ডিতভাবে ইসলাম অনুসরণের বিষয়ে পবিত্র কালামে হাকীমে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, যারা এমন করবে তাদের জন্য দুনিয়াতে অপদস্ত ও বেইজ্জতি হবে এবং আখারাতে জাহান্নামে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। মূলত, জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান অনুসৃত না হওয়ায় কারণে সমাজে এত অশান্তি। তাই সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কুরআন-সুন্নাহর আদর্শভিত্তিক ন্যায়-ইনসাফ ও বৈষমহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ তিনি সে স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে একদফায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘মূলত ওহীর বিধান প্রতিষ্ঠিত না থাকায় সমাজে নানাবিধ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে অবক্ষয় ও অশান্তি। সঙ্গত কারণেই আমাদের পুরো সমাজ অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য আমাদের সমাজজীবনকে অস্থির ও অশান্ত করে তুলেছে। মূলত, এসব আমাদের দু’হাতের কামায়। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান এবং এদেশে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসাসহ অগণিত ইসলামী মারকাজ থাকলেও সমাজে আল্লাহর হুকুমের বাস্তবায়ন না থাকায় এসব পুরোপুরি কাজে আসছে না। তাই আমাদের ঘুণেধরা এ সমাজকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে অলোকিত করতে হবে। তাহলে আর্ত-মানবতার মুক্তি অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠছে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘মোমিন জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য হলো শাহাদাত। হাদিস শরীফের বর্ণনামতে, যার মধ্যে শাহাদাতের তামান্না নেই, তার ঈমানই নেই। তাই আমাদের সকলকে শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ময়দানে কাজ করতে হবে।’
তিনি নিজের শাহাদাতের তামান্নার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাকে রক্তাক্ত চাদরাবৃত্ত অবস্থায় শাহাদাত এবং আমার প্রতিফোটা রক্ত ইকামাতে দ্বীনের স্তম্ভ হিসাবে কবুল করেন।’
তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ময়দানে সকলকে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো, স্বৈরাচার কর্তৃক ধ্বংস করে দেয়া রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কার্যকর সংস্কার এবং গণহত্যাকারীদের বিচারের দৃশ্যমান হওয়ার পর অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু তারা একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চায়। কিন্তু তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না বরং গণদাবি আদায়ের মাধ্যমেই নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে।’



