জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করা চ্যালেঞ্জিং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের উদ্ধৃতি তুলে ধরে ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে গণহত্যার (জেনোসাইড) সামিল হবে। যেখানে কমিশন গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করাকে চ্যালেঞ্জিং মনে করে সেখানে সরকার গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে কমিশনকে চিঠি দিয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে না করে, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত পারে নির্বাচন ব্যবস্থাকে জেনোসাইডের হাত থেকে রক্ষা করতে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহবাগ পূর্ব থানার উদ্যোগে ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকায় নির্বাচনী প্রচার মিছিলপূর্ব রাজধানীর গুলিস্তানে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন জাতির পরবর্তী ভাগ্য নির্ধারণের নির্বাচন। কোনোভাবেই এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। গণভোট জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়ার সর্বোত্তম একটি মাধ্যমে। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেবে সরাসরি জনগণ। জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ আর কোনো ব্যক্তি বা পরিবার কিংবা দলের মতামতের বা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে না।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে কোনো ব্যক্তি বা একক দল রাষ্ট্র পরিচালনা করবে না, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এদেশের শীর্ষ আলেম-ওলামারা। যাদের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত করা সম্ভব। তিনি বলেন, যারা দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান তাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গেলে তারা এবার দেশকে দেউলিয়া করে ছাড়বে। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব জাতির নেতৃত্ব দিতে পারে না। যারা ক্ষমতার জন্য নিজেদের নেতাকর্মীকে খুন করে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রাখতে হাসিনার চেয়েও ভয়াবহ গণহত্যা চালাবে। যাদের হাতে কর্মীর রক্ত লেগে আছে তাদের কাছে কখনো দেশ ও জাতি নিরাপদ নয়।
দেশ ও জাতির নিরাপত্তার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে একটি ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে তিনি দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
"নিরাপদ ও বাসযোগ্য মানবিক"- ঢাকা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, সারাদেশের ন্যায় ঢাকা-৮ আসনকে একটি নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী। আগামীতে জনগণ তাকে নির্বাচিত করলে ঢাকা-৮ আসনকে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ-দুর্নীতিমুক্ত একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য মানবিক এলাকা হিসেবে জনগণকে উপহার দেয়া হবে। জনভোগান্তি দূরীকরণে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদুৎ ও পানি সরবরাহের পদক্ষেপ নেয়া হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দৌড়গৌড়ে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি শিশুদের মেধা বিকাশে খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের আয়োজন করা হবে। মাদক মুক্ত করতে যুব সমাজের জন্য খেলাধুলা ও শরীর চর্চার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা করা হবে।
"আমার ঢাকা, আমাদের ঢাকা; গড়বো মোরা একসাথে" স্লোগানে ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকাকে নতুন বাংলাদেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয়দের জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য মানবিক শহর উপহার দেয়াই জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীকার। সব দল দেখা শেষ উল্লেখ করে তিনি, জামায়াতে ইসলামীকে পরীক্ষামূলক একবার নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীকার, জাতি পাবে নিরাপদ এক কল্যাণ রাষ্ট্র। জুলাইয়ের শহীদদের স্বপ্নের বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক নতুন বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে সমর্থন দিতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহবাগ পূর্ব থানা আমির আহসান হাবীবের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি নুর নবী রায়হানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালক মুহাম্মদ শামছুর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহীন আহমেদ খান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা শরিফুল ইসলাম, মতিঝিল উত্তর থানা আমির মো. শামসুল বারী, মতিঝিল পূর্ব থানা আমির মো. নুরুদ্দীন, মতিঝিলি পশ্চিম থানা আমির মো. সরোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি সোহেল রানা মিঠুসহ ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকার জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।



