আলোচনা সভায় বক্তারা

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের দেয়া হলে বৃহত্তর কর্মসূচি

গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘বন্দর চালানোর যদি দেশে লোক না থাকে তাহলে বিদেশ থেকে আমরা এক্সপার্ট আনতে পারি। যেমনটি গার্মেন্টস শিল্প উন্নয়নে বিদেশের সহযোগিতা নেয়া হয়েছিল।’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিবাদ সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতৃবৃন্দ
প্রতিবাদ সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতৃবৃন্দ |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশীদের হাতে দেয়া হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বক্তারা।

রোববার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ’ শীর্ষক প্রতিবাদ সভা থেকে সরকারের প্রতি এ হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘দেশে তো দুর্নীতি কমেনি বরং বেড়েছে। কারণ হাসিনার আমলের ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনো রয়ে গেছে। এই সরকার তো দুর্নীতি রোধে হাত দেয়নি! কয়জনকে ধরা হয়েছে? ধরার উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি বিচারও করেনি।’

এই মুহূর্তে দেশ ও বন্দর বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘বন্দর চালানোর যদি দেশে লোক না থাকে তাহলে বিদেশ থেকে আমরা এক্সপার্ট আনতে পারি। যেমনটি গার্মেন্টস শিল্প উন্নয়নে বিদেশের সহযোগিতা নেয়া হয়েছিল।’

হাসিনা পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা নিয়ে আন্দোলনে আছি। মাঝখানে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ছাত্ররাও আসেন। অর্থাৎ সংস্কার নিয়ে আমরা তো একমত আছি। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো তো একমত। তাদেরকে ডেকে পরামর্শ নিয়ে সংস্কারের পথ ত্বরান্বিত করেন। আমরা চাই ড. ইউনূস সফল হোক। তিনি সফল মানে তো জুলাই অভ্যুত্থানের সফলতা। আজকে ছাত্ররা ডেইলি সচিবালয়ে যায় কেন? ওসির টেবিলের সামনে বসে থাকে কেন?’

সভার আয়োজন করে ‘দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলন’। বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ও দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন সেলিম।

বাংলাদেশ এলিডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান প্রমুখ।

মোস্তফা জামাল হায়দার সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘নয় মাসে একজনেরও বিচার হয়নি। তারা চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি— সেটি বিদেশী কোম্পানিকে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। দরকার হলে দেশের মেধাবী কর্মকর্তা দিয়ে বন্দর পরিচালনা করুন। আমরা আমাদের অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রকে কারো কাছে দিব না।’

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, ‘বন্দর নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ও জাতির স্বার্থ দেখতে হবে। আজকে জিটুজি পদ্ধতিতে বন্দর দেয়ার চিন্তা করছে। আবার পিপিপি পদ্ধতিতে দেয়ার কথা বলছেন। একটা কথা মনে রাখা দরকার, ২০২১ বা ২০২২ সালের দিকে শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের জামাই যখন দুবাই কারাগারে আটক তখন সালমান এফ রহমান একটা টার্মিনাল বের করে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেয়ার জন্য। তখনো আমরা বিরোধিতা করেছি। আবারো সেই একটি কোম্পানিকে সাবের হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে দেয়ার কথা শুনছি। আমরা বলছি— নতুনভাবে একটা টাকা বিনিয়োগের সুযোগ নেই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে যাতে চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দেয়া না হয়।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উত্তম। বাংলাদেশের যে সম্পদ তা খুব সীমিত। বঙ্গোপসাগর ও চট্টগ্রাম বন্দর অন্যতম। ফলে দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্দর দেয়ার বিষয়ে গণশুনানি করুন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করুন। কারণ আপনারা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সরকারের উচিত অতিদ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।’

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছি। আজকে এ বিষয়ে সকলে সোচ্চার হয়েছেন। বর্তমান সরকারের চিন্তা-ভাবনা করা দরকার ছিল। সবকিছু করার ম্যান্ডেট তো অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তাদের কাজ হলো গণহত্যার বিচার করা আহতদের সুচিকিৎসা করা, নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়া, সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দিন। বন্দর লিজ দেয়া, এনবিআর ভাঙা আপনাদের কাজ না। সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করবেন না। দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। করিডোর, বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন। নির্বাচিত সরকার সেটি দেখবে।’

সাইফুল হক বলেন, ‘অনুগ্রহ করে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে থাকেন। রোডম্যাপ ঘোষণা করে জনগণকে আশ্বস্ত করেন। উপদেষ্টাদের একেরপর এক বক্তব্য রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ ভাবছেন। যাদের কারণে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাদেরকে অব্যাহতি দেন না হলে অপসারণ করুন। সরকার সঠিকভাবে মনযোগ সহকারে কাজ করলে ডিসেম্বর তো বটেই তার আগে নির্বাচন করা সম্ভব। কোনো হঠকারিতা করবেন না। আপনাদের সুমতি হোক। না হলে এই দলগুলো মিলে আন্দোলন গড়ে তুলবো দেশ ও বন্দর রক্ষা করবো।’

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আগামীতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত না আসলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।’