গোলাম পরওয়ার

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান শুরু

এসময় তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘তিন দশক/চার দশক আগের ঘটনায় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বিচার হতে পারলে ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের বিচার কেন হবে না?’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা তাণ্ডবে সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে করা জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ অন্যরা
আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা তাণ্ডবে সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে করা জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ অন্যরা |সংগৃহীত

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান শুরু বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এসময় তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘তিন দশক/চার দশক আগের ঘটনায় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বিচার হতে পারলে ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের বিচার কেন হবে না?’

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা তাণ্ডবে সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে বিক্ষোভ মিছিলপূর্বক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ‘যারা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চায় তারা জুলাই সনদকে অকার্যকর করতে চায়। তাদের খারাপ উদ্দেশ্য জাতি বুঝে গেছে। এরা প্রথমত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই রাজি হয়নি। পরে অন্য সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য দেখে কৌশলগত কারণে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে একমত হলেও তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। এজন্য তারা গণভোটের পক্ষে মত দিলেও গণভোট আয়োজন নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে নানারকম ভ্রান্ত যুক্তি উপস্থাপন করছে।’

জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চাইলে তার আগে নভেম্বরে গণভোট হলে আপত্তি কেন— জাতির সামনে স্পষ্ট করতে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এদেশের জনগণ বোকা নয়, জনগণকে ধোঁকা দেয়া যাবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আদেশ জারি করে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট দিতেই হবে।’

দ্রুত বিচার আইনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান শুরু। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘দিল্লি বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নভেম্বরে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে তার আগেই হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ না করে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। তারা সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে নির্বাচনকে বিতর্তিক করার চেষ্টা করবে। জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সরকারের ভেতরে-বাহিরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে।’

সমাবেশের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক দিন। এই দিনটি পল্টন ট্র্যাজেডি হিসেবে পরিচিত। ওইদিন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করার আগে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ২৭ অক্টোবর রাতে হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীকে লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে নেমে আসার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ১৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। পল্টনে জামায়াতের সমাবেশ শুরুর আগেই ২৮ অক্টোবর সকাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর তারা লাশের উপর নৃত্য করেছে। যেই দৃশ্য সারাবিশ্বের কোটি-কোটি মানুষকে ব্যথিত করেছে। ওই ঘটনায় মামলা হলেও সে মামলা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বেআইনিভাবে বাতিল করে দিয়েছিল।’

তিনি ওই মামলা পুনরুজ্জীবিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘প্রকৃত অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ বছর শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদের নেতৃত্ব দিয়েছে। তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সকল অপকর্মের সমান অপরাধী। তাই হাসিনাসহ ১৪ দলীয় নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ করে দেশ থেকে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন (ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী), কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন (ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী), কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন (ঢাকা-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী), কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো: শামছুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কবির আহমদ (ঢাকা-৯ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী), মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, আব্দুস সালাম, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন (ঢাকা-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী), ড. মোবারক হোসেন (কুমিল্লা-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী), কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমেদ খান, মাওলানা শরিফুল ইসলাম। এছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াত-শিবির সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে থেকে আওয়ামী লীগের অস্ত্রের মুখে দেশ রক্ষায় লড়ই করেছে। আমাদের নেতাকর্মী রাজপথ থেকে এক ইঞ্চি দূরেও সরে যায়নি। সেই ধারা অব্যাহত রেখে আজও জামায়াত-শিবির মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা রেখে আসছে। সেদিন বিএনপি যদি জামায়াত-শিবিরের সাথে একসাথে সন্ত্রাসী আওয়ামী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসতো তবে আধিপত্যদের দোসর আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৮ বছর জাতির ওপর জুলুম-নির্যাতন করার সুযোগ পেতো না।’

তিনি হাসিনার নির্দেশে পরিচালিত সকল গণহত্যার মামলার কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘শাপলা চত্বরে পরিচালিত গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের মতো ২৮ অক্টোবরের শহীদদের পরিবারকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহযোগিতা এবং সম্মাননা প্রদান করতে হবে।’

সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে শুরু করে বিজয়নগর, কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর অভিমুখে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলে হাজার-হাজার নেতাকর্মী ২৮ অক্টোবরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে।