বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রায় চার দশক ধরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত আছেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াই, কারাবরণ (একটানা ৩৩০ দিন), সংগঠন পরিচালনা—সব মিলিয়ে তিনি এখন বিএনপির অন্যতম নির্ভরযোগ্য অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে। যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্তমান রাজনীতি, তরুণদের ভূমিকা, সংগঠনের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি নয়া দিগন্তকে একটি নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেটিই তুলে ধরা হলো—

নয়া দিগন্ত : আপনি তো এখন একটি বৃহৎ সংগঠনের সভাপতি। রাজনীতিতে এলেন কিভাবে?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : আমি তখন স্কুলে পড়ি—ক্লাস নাইন। ৩০ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের দিনটিতে আমার জীবনে এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়। আমাদের বাসায় এক ভদ্র মহিলা কান্না করতে করতে বললেন—‘জিয়াউর রহমান সাহেবকে মেরে ফেলছে।’ আমি তখনো শিশু, কিন্তু সেই কান্নার দৃশ্য আমার মনে গভীর ছাপ ফেলে। সেই দিন থেকেই জিয়াউর রহমানের প্রতি ভালোবাসা আমার রাজনীতিতে আগ্রহ তৈরি করে।
এরপর কলেজ জীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হই, কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস নির্বাচিত হই। পরে মতিঝিল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, যুব ছাত্রদল, তারপর ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু। ধীরে ধীরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, পরে সাধারণ সম্পাদক এবং অবশেষে সভাপতি। প্রায় ৪০ বছরের রাজনৈতিক পথচলা আমার।
নয়া দিগন্ত : এই দীর্ঘ রাজনীতিতে সবচেয়ে কষ্টের বা স্মরণীয় মুহূর্ত কোনটি?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : সবচেয়ে কষ্টের দিনটি ছিল যেদিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সেদিন তার কান্না আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল। আর শিক্ষা হিসেবে বলব—শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সততা, দেশপ্রেম ও শৃঙ্খলা থেকে আমরা শিখেছি—কিভাবে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মানবিকতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিষ্ঠা, ভদ্রতা, দেশপ্রেম—এসবই আমাদের অনুপ্রেরণা।
নয়া দিগন্ত : ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে যুবদলের অবদান কেমন ছিল?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : আমরা টানা ১৫ বছর সাত মাস রাজপথে লড়েছি। ২০২২ সালে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাকে হাসিনার পুলিশ ১১ মাস জেলে বন্দী রেখেছিল, ২৫ বার রিমান্ডে নিয়েছিল। আমি জানি, এ লড়াই শুধু আমার না—আমাদের শত শত নেতাকর্মীর।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের ৭৮ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। হাজারো যুবদল কর্মী আহত, গুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারপরও আমরা রাজপথ ছাড়িনি। বিএনপির নেতৃত্বে যুবদলই ছিল সবচেয়ে সংগঠিত ও দৃঢ় অঙ্গসংগঠন।
নয়া দিগন্ত : ৫ আগস্টের পরের সময়টায় যুবদলকে কিভাবে সচল রেখেছেন?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : আমরা শৃঙ্খলা রক্ষায় খুব কঠোর ভূমিকা নিয়েছি। যেখানেই কোনো সমস্যা হয়েছে, সাথে সাথে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের কাছে কোনো অচল অবস্থা নেই। জেলা, উপজেলা, মহানগর—সব কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এছাড়া সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছি—নদী পরিষ্কার, রাস্তা সংস্কার, ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা সহায়তা—এই সবই আমাদের কার্যক্রমের অংশ।
নয়া দিগন্ত : আসন্ন নির্বাচনে যুবদলের ভূমিকা কী হবে?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : বিএনপি যে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে, যুবদল তাদের পক্ষে মাঠে থেকে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগ করবে। ভোটের দিন পর্যন্ত আমরা জনগণের পাশে থাকব, ভোট রক্ষা করব—এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
নয়া দিগন্ত : ১৬ মাসে যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না কেন, প্রতিবন্ধক কী?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দলের সময় ব্যয় হয়েছে জাতীয় ইস্যুতে। আমাদের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই সুখবর আসবে।
নয়া দিগন্ত : তরুণরা এখন রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে—আপনারা কিভাবে তাদের কাছে টেনে আনবেন?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তারা আমাদের প্রতি আগ্রহী—বিশেষ করে তারেক রহমানের বক্তব্যে তরুণ সমাজ নতুন আশা দেখছে। আমরা তাদের মানবসম্পদে রূপান্তরের চিন্তা করছি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম যুব মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন। সেই ধারায় আমরা নতুন প্রজন্মকে কর্মমুখী ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে চাই।
নয়া দিগন্ত : জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর খোঁজখবর রাখছেন কি?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : অবশ্যই। প্রতিটি পরিবারকে জেলা পর্যায়ে আমরা সহায়তা দিচ্ছি। তারেক রহমানের নির্দেশে বগুড়ায় এক শহীদ পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তাও আমরা নিয়মিত দিচ্ছি।
নয়া দিগন্ত : যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশেষ আয়োজন কী?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : আমরা আগস্টে শিশুদের নিয়ে ‘আজকের শিশু, আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ স্লোগানে শিশু উৎসব করেছি। চারুকলার বকুলতলায় শিশুদের গ্রাফিতি ও অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ১,০০০ শিশুকে পুরস্কৃত করা হবে।
নয়া দিগন্ত : জুলাই আন্দোলনের পর যুবদল কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন—একটি উন্নত, মানবিক ও অংশগ্রহণমূলক বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেই দিকেই এগোচ্ছি। তিনি একজন সৎ, সাধারণ জীবনযাপনকারী স্টেটসম্যান। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ চাইলে উনি এই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
নয়া দিগন্ত : পাঁচ বছর পর যুবদলকে কোথায় দেখতে চান?
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : আমি চাই, যুবদল মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিক। সামাজিক ও মানবিক কাজে মানুষের আস্থা অর্জন করুক। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে যুবদল আরো বড় পরিসরে, আরো শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
নয়া দিগন্ত : আপনাকে ধন্যবাদ।
আব্দুল মোনায়েম মুন্না : প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পূর্তিতে নয়াদিগন্তকে শুভেচ্ছা, আপনাকেও ধন্যবাদ।



