অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদের সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে যেগুলো সংবিধানকে স্পর্শ করে না— এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত মতামত, মৌখিক মতামত সবসময় দেয়া ছিল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও একই রকম মতামত দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আজকে আমাদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল। বাস্তবায়নে মোটাদাগে ছয়টা মতামত এসছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। কমিশন আলোচনার মধ্য দিয়ে চারটা বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে দিয়েছে, যে জুলাই সনদ কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে। একটা সাজেশন অধ্যাদেশ প্রণয়নের মধ্য দিয়ে, নির্বাহী আদেশ প্রণয়নের মধ্য দিয়ে, গণভোট এবং বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ। এরমধ্যে অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশ— এগুলোর মধ্য দিয়ে জুলাই সনদের সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে, যেগুলো সংবিধানকে স্পর্শ করেন না। এ বিষয়ে লিখিত মতামত, মৌখিক মতামত আমাদের সবসময় দেয়া ছিল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও একই রকম মতামত দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন আসছে, সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত ১৯টি মৌলিক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যায়, সে বিষয়ে মতামতের জন্য কমিশন বৈঠক ডেকেছিলেন। প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতামত দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য যেকোনো সুপারিশ, যেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নাধীন আছে এবং সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে, নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে অথবা অফিস আদেশসহ অন্যান্য বৈধ যেকোনো প্রক্রিয়ায়। যে প্রস্তাবগুলো আশু বাস্তবায়নযোগ্য নয় অথচ বাস্তবায়ন করার সুযোগ আছে সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য এই সরকার উদ্যোগ নিতে পারে, এমনকি সমাপ্তও করতে পারে, যদি সম্পন্ন না হয় পরবর্তী সরকার সেটা তারা কন্টিনিউয়েশন (ধারাবাহিক) রাখবে, বাস্তবায়ন করবে। আর জুলাই সনদের সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করে জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে যে যারাই ম্যান্ডেট পাবে পার্লামেন্টে যাবে তারা এগুলো বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে বিষয়গুলো সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত সেই বিষয়গুলো এখন প্রতিশ্রুতি আকারে, অঙ্গীকার আকারে স্বাক্ষর করে, সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তীতে গঠিত জাতীয় সংসদের দুই বছরের মধ্যে সমস্ত সংশোধনী বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। এইভাবে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’
‘এখানে প্রশ্ন আসছে, প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার জারির মধ্য দিয়ে এই সাংবিধানিক সংশোধনীগুলোকে এখনই কার্যকর করা যায় কিনা? কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং লিখিত সাজেশনও একটি রাজনৈতিক দল দিয়েছে। যেকোনো রকমের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সাংবিধানিক সংশোধনের বিষয়ে যাতে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেই সেই জন্য আমরা এই আলোচনাটা করেছি এবং আমরা আমাদের সাজেশন দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদ স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। এবং এই সনদের প্রতিশ্রুতিগুলো, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। এবং এরমধ্য দিয়ে আগামী দিনে আমাদের একটা নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হবে। এই বিশ্বাস আমাদের আছে,’ বলেন তিনি।
বিএনপি যেগুলোতে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছে, বিএনপি এগুলো সংসদে বাস্তবায়ন করবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছি দুইটা বিষয়ে। এই দুইটা বিষয়ে নোট অফ ডিসেন্ট আমরা যেভাবে উল্লেখ করেছি, সেটা উল্লেখিত থাকবে এবং সেইভাবেই যদি আমরা ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হই আমরা সেভাবেই বাস্তবায়ন করব। দিস ইজ নোট অফ ডিসেন্ট।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অভিপ্রায় অনুসারেই তো আমরা আলোচনা করছি। এ অভিপ্রায় অনুসারেই তো আমাদের সমস্ত আলোচনা মাধ্যমে কনস্টিটিউশন চেঞ্জ করার জন্য, এমেন্ড করার জন্য, সংস্কার করার জন্য একমত হচ্ছি। এখন এই প্রক্রিয়াগুলো কিন্তু অসাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রের যেকোনো জনগণ আইন সংশোধনের জন্য সংবিধান সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে পারে আলোচনা করতে পারে কিন্তু বায়োলেশনটা তো হচ্ছে না। এই পরামর্শগুলো এগ্রিড হলে পরবর্তী পার্লামেন্টে যখন গৃহীত হবে, তখন সেটা জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে গৃহীত বলে গণ্য হবে।’