বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্থ নেতৃত্বের মাধ্যমে দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।’
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা-৬ আসনের বংশাল উত্তর থানার উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ পূর্বক স্থানীয় সুরিটোলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘নেতা যদি সন্ত্রাস করে, চাঁদাবাজি করে, টেন্ডারবাজি করে, লুটপাট করে তাহলে কর্মীদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, লুটপাট ঠেকানো যায় না। অতীতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। দুর্নীতিমুক্ত সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত বসবাসযোগ্য মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে দুর্নীতি-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ মুক্ত নেতৃত্বকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। আজকে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে, চাঁদাবাজি রন্ধ্রে রন্ধ্রে, একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য বা মেরামতের জন্য যদি এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয় এরমধ্যে ৭০ শতাংশই মেরে দেয়া হয়। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই মিলেমেশে খেয়ে ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের চাঁদা দিয়ে সম্পদ রক্ষা করতে হয়, চাঁদা দিয়ে অধিকার রক্ষা করতে হয়। কারা এসব চাঁদা নিচ্ছে জনগণ তাদের চেনে এবং জনগণ তাদেরকে ভোটের মাধ্যমেই এর জবাব দেবে। জনগণ আর কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের হাতে বাংলাদেশ ছেড়ে দেবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজ সেবা মন্ত্রণালয় থাকলেও দেখা যায় মানুষের প্রয়োজনে সরকার স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছে না। সরকারের অনুপস্থিতিতে মানুষের বিপদে-আপদে সবার আগে, সবখানে জামায়াতে ইসলামী ছুঁটে যায় এবং যাবে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো-কোনো রাজনৈতিক দলকে কেবল নির্বাচন আসলে জনগণের পাশে দেখা গেলেও পরবর্তীতে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের খুঁজতে হয় না, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী সবসময় মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে, ইনশাআল্লাহ। জামায়াতে ইসলামী দুনিয়ার কোনো স্বার্থে মানুষের সেবা করে না, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মানুষের সেবা করে এবং করবে। মানবতার সেবায় আমরা জিজ্ঞাস করি না আপনি কোন দল করেন কিংবা কোন দলকে সমর্থন করেন অথবা আপনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী। আমরা শুধু মানুষ হিসেবে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে মানবতার সেবা করে আসছি।’
জামায়াতে ইসলামী শুধু বছরে একবার শীতবস্ত্র বিতরণ করেই লোক দেখানো দায়িত্ব পালন করে না বলে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবার আগে, সবখানে মানুষের প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং দাঁড়াবে। জামায়াতে ইসলামী চার দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারমধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সমাজ সেবা ও সমাজ সংস্কার। এরই ধারবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী সমাজ কল্যাণে ব্যাপক ভিত্তিক সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব কার্যক্রমে জামায়াতে ইসলামী কখনো দলমত বা ধর্মবর্ণ কিংবা জাতি-গোষ্ঠীর বিভাজন করেনি, করবে না। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে সমাজে মানুষ হিসেবে আমরা সকলেই এক এবং অভিন্ন। আমাদের পরিচয় আমার বাংলাদেশের নাগরিক। যারা নিজেদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষের লোক দাবি করেছে তারাই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়েছে, তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। অতীতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করে তাদের নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে এদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ সুবিধা ও অধিকার লাভ করবে।’
তাই দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে নতুন বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর মানবতার সেবার যাত্রা আরো গতিশীল করতে জামায়াতে ইসলামী শীতের শুরুতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-৬ আসনের বংশাল উত্তর থানা এলাকায় আজকে দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি। আগামীতে ঢাকা-৬ আসনের জনগণ যদি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচিত করে আমরা মানুষের কল্যাণে আরো ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করবো। রাজধানীতে যেই গ্যাসের সমস্যা সেটি নিরসন করে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। পুরান ঢাকা জলাবদ্ধতা ও সড়কে দীর্ঘ যানজট একটি অন্যতম সমস্যা পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে পুরান ঢাকার জলবদ্ধতা ও যানজন স্থায়ীভাবে নিরসন করা হবে। ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকার চিত্র দেখলে মনে হয় স্বাধীনতা পরবর্তী বিগত ৫৪ বছর এ আসনে কোনো এমপি ছিলেন না। যার কারণে এ আসনের কোনো এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। আগামীতে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকাকে একটি মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’
আধুনিক উন্নত শহর হিসেবে ঢাকা-৬ এলাকাকে গড়ে তুলতে তিনি স্থানীয় জনসাধারণকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বংশাল উত্তর থানা আমির মনির হুসাইন পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালক কামরুল আহসান হাসান, মহানগরীর সহকারী প্রচার সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবদুস সাত্তার সুমন, চকবাজার-বংশাল জোনের সহকারী পরিচালক এস এম আহসান উল্লাহ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা-৬ সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে, ছয় শতাধিক পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন প্রধান অতিথি মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল।



