চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মারধর করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে একটি মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরেরদিন শনিবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত থেকে এ মামলায় জামিন পান তিনি।
উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে নাছিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। নোটিশে বলা হয়েছে, আপনি (নাছির) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বশীল পদে আসীন আছেন। সম্প্রতি আপনার বিষয়ে গণমাধ্যমে সাংগঠনিক নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আপনাকে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হলো।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির শনিবার এই নির্দেশনা প্রদান করেন।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, শেখ নাঈম আহমেদ নামের একজন ট্রাভেল এজেন্ট চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মারধর করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে গুলশান থানায় মামলাটি করেন। মামলায় নাছির ছাড়াও আসামি হিসেবে মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ হেলাল নামের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে শেখ নাঈম আহমেদ উল্লেখ করেছেন, তিনি ৯ অক্টোবর বেলা ১টার দিকে ব্যবসায়িক আলোচনায় অংশ নিতে গুলশান-১ এলাকায় যান। আলোচনা শেষ করে গুলশান-১ গোলচত্বরের পশ্চিম পাশে বিসমিল্লাহ হানিফ বিরিয়ানি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে খেতে যান। খাওয়া শেষ হলে নাছির উদ্দিন শাওন তাকে ফোন করে দুবাইয়ের বিমান টিকিট কাটবে বলে তার অবস্থান জানতে চান। তিনি নাছিরকে তার অবস্থান জানান। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নাছির (২৮), মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪৬), মোহাম্মদ হেলালসহ (২৬) অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জন তাকে অস্ত্রের মুখে সেখান থেকে জোর করে গুলশানের আরেকটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে যান।
শেখ নাঈম আহমেদ আরো উল্লেখ করেন, এ সময় তার কাছে থাকা ফোন, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ নিয়ে নেন তারা। এরপর তারা তার কাছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এরপর মোবাইল থেকে ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করেন। এরপর সেখানে তার (শেখ নাঈম) ভাইয়ের ছেলে এলে তাকে ল্যাপটপটি দিয়ে দেন নাছিরেরা। তিনি টাকা দিতে রাজি না হলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে গুলশান-১ এলাকার লেকপাড়ে নিয়ে মারধর করে রাত ১০টার মধ্যে টাকা দিতে বলেন, না হলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন তারা। মারধরের মুখে তিনি তার পরিবারকে খবর দেন এবং কিছুটা সময় চান। টাকা না আসায় রাত পৌঁনে ১২টার দিকে তারা তাকে তাদের মোটরসাইকেলে করে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার পাশ দিয়ে হাতিরঝিল সংযোগ সড়কের দিকে নিয়ে যান। এ সময় তিনি চিৎকার করলে যৌথ বাহিনীর চেকপোস্টে তাদের থামানো হয়। তখন তাকে ও আসামি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে ফেলে অন্য আসামিরা পালিয়ে যান। পরে যৌথ বাহিনী ইদ্রিসকে আটক করে তার (নাঈম) মুঠোফোন উদ্ধার করে ফেরত দেন। যৌথ বাহিনী তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ইদ্রিসকে গুলশান থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, হাতিরঝিল এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নাঈমকে সেনাবাহিনী উদ্ধার করে। এ সময় ইদ্রিসকে আটক করে সেনাবাহিনী। শুক্রবার এ ঘটনায় নাছির ও হেলালকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়।
জামিনের পর এ বিষয়ে নাছির উদ্দিন শাওন বলেন, মামলার বাদি শেখ নাঈম আহমেদ তার ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনেক মানুষের থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তেমনি মোহাম্মদ ওয়াহেদ নামের তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এ সংক্রান্ত প্রমাণ তার কাছে আছে। টাকার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাদের ফাঁসানো হয়েছে। পরে ভুল বুঝতে পেরে বাদি অনাপত্তি দেয়ায় আদালত তাকে জামিন দেন। তবে বাকি দুজন এখনো কারাগারে আছেন।