বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দেশে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হবে। আবার পতিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ পাবে, সেটা কি আমরা চাইতে পারি? অবশ্যই না। যদি নির্বাচন বানচাল হয়; তাহলে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সালাহউদ্দিন বলেন, পিআর (প্রফেশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ) পদ্ধতিতে স্থিতিশীল সরকারব্যবস্থা থাকে না। দুই মাস, ছয় মাস, পাঁচ মাস, এক বছর পরে সে সব জায়গায় খালি প্রধানমন্ত্রী চেঞ্জ হয়, সরকার চেঞ্জ হয়। কোনো প্রত্যাশা, জনপ্রত্যাশা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। কোনো দলের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। জনগণের কল্যাণে কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। একটা অস্থিতিশীল অস্থির পরিবেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আমরা যেতে দিতে চাই না। যেখানে সিম্পল মেজরিটি অথবা মেজরিটির ভিত্তিতে কোনো দল এবং জোট সরকার গঠন করতে পারে না, সেরকম একটা ব্যবস্থাকে আমরা আহবান জানাতে পারি না।
তিনি বলেন, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতি কী, তা বুঝে না। সে জায়গায় ৭০ শতাংশ লোক না কি পিআর চায়, সেই পরিসংখ্যান তো আমরা মানতে পারি না। এরকম বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ভুল বোঝানো বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা অনুচিত হবে। যে সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে এবং দেশের স্বার্থকে, জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, তাদের বলব আপনারা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সঠিক রাস্তায় ফেরত আসুন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো জায়গা আছে? তারা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সাংবিধানিক অধিকার রাখে না?
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা পিআর পদ্ধতি চায়, তারা নির্বাচনী ইশতেহারে সেটা প্রকাশ করুক। জনগণের কাছে যাক, জনগণ যদি তাদের ইশতেহারের পক্ষে ভোট দেয়, তখন তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে।
কনস্টিটিউশনাল অর্ডারে কে দায়িত্ব দিয়েছে সংবিধাধন সংস্কার করার- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সংবিধান ছেলেখেলা নয়, ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না। এই রাষ্ট্রকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে দিতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে আমরা কোনোদিন মাথা নত করতে পারি না। এখানে জনগণের স্বার্থ চূড়ান্ত। এই জনগণের অভিপ্রায়ই চূড়ান্ত।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা যেন কেউ আবেগী না হই। কেউ যেন এটা না বলি, গণপরিষদের মাধ্যমে সংবিধান করতে হবে। গণপরিষদের মাধ্যমে সংবিধান প্রণীত হলে সেই সংবিধানকে আর পরিবর্তন করা যাবে না? ’৭২ সালে যে সংবিধান প্রণীত হয়েছে, সেটা কি গণপরিষদের মাধ্যমে হয়নি? সেটা কি এক বছরের ভিতরে পরিবর্তন করতে হয়নি? সংশোধনী আনতে হয়নি? নতুনভাবে যদি গণপরিষদের নামে আমরা একই জিনিস ধারণ করে এটাকে নতুন সংবিধান নাম দেই, তখন কি সেই সংবিধান পার্মানেন্ট হয়ে যাবে? সেটা কি পরিবর্তন করা যাবে না। অবশ্যই পরিবর্তন করা যাবে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে আছি আমরা, তর্ক করব-বিতর্ক করব, বহুমত পোষণ করব। আবার জাতির স্বার্থে জাতীয় ইস্যুতে আমরা ঐক্যমত পোষণ করব। এটাই গণতান্ত্রিক যাত্রা। সুতরাং যারা যে সমস্ত দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই অধিকার সেই চর্চা সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু রাখি। আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি এই গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য।
‘এমনভাবে আমরা জাতীয় ঐক্যমতে আসব জাতীয় ইস্যুতে, যাতে জনগণ বিজয়ী হয়, এদেশের মানুষ বিজয়ী হয় এবং আমরা সকল রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে পরাজিত হবো’ এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।