নূরুল ইসলাম বুলবুল

জাতীয় নির্বাচনকে অর্থবহ করতে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘মার্কা দেখে নয়, জনগণ এবার দলীয় কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে ভোট দিবে।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
বক্তব্য রাখছেন মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল
বক্তব্য রাখছেন মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল |নয়া দিগন্ত

জাতীয় নির্বাচনকে অর্থবহ করতে হলে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘মার্কা দেখে নয়, জনগণ এবার দলীয় কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে ভোট দিবে।’

তিনি বলেন, ‘যে দলের নেতাকর্মীরা ৫ আগস্ট-পরবর্তী সারাদেশে খুন, গুম, লুটপাট, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে সেই দলই এখন ভয়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন মেনে নিতে পারতেছে না। কারণ তারা জানে পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করা যাবে না, ভোট চুরি করা যাবে না, অস্ত্রের মহড়া দেয়া যাবে না। তারা চাচ্ছে পুরোনো ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে কোনোমতে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে ভোট চুরি করে যদি এক ভোটও বেশি আদায় করা যায় তাহলে বিজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে।’

‘জাতি যাদের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে সেই তরুণ ছাত্রসমাজ দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটের হিস্যা বুঝে নিবে। এক ভোটের ব্যবধানে লাখ-লাখ ভোট নষ্ট হয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বাতিল করতে হবেই, হবে,’ বলেন তিনি।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ঢাকা-৪ সংসদীয় আসনের কদমতলী এলাকায় বেকারত্ব দূরীকরণে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মহীনদের মাঝে রিকশা-ভ্যান বিতরণ-পূর্বক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘অতীতে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণের ফলে ঢাকা-৪ সংসদীয় এলাকা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই এলাকার উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ কোটি টাকা ক্ষমতাসীনরা আত্মসাৎ করেছে। আগামীতে জামায়াতে ইসলামীকে দেশবাসী সুযোগ দিলে, রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের প্রতিটি পয়সার হিসাব জনগণের সামনে তুলে ধরবে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামী পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করলে দেশ উন্নয়নের দিক থেকে ২৫ বছর এগিয়ে যাবে। কারণ জামায়াতে ইসলামীতে কোনো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ নেই।’

‘জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি হচ্ছে মানুষের ভাগ্যান্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায়। অন্য দলের মতো নির্বাচন এলে লোক দেখানো সমাজসেবা জামায়াতে ইসলামী করে না। জামায়াতে ইসলামীর চার দফা কর্মসূচির অন্যতম একটি হচ্ছে সমাজ সংস্কার ও সমাজসেবা। জামায়াতে ইসলামী দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে ব্যাপকভিত্তিক সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, আগামীতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

বেকারত্ব দূরীকরণে জামায়াতে ইসলামী যুবসমাজের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি প্রশিক্ষত জাতি গঠনের লক্ষ্যে যুব সমাজকে নৈতিক ও আদর্শিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মতোই আরেকটি রাজনৈতিক দল যুবসমাজের হাতে মাদক আর অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। তারা যুবসমাজকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে যুবসমাজকে বিপৎগামীর চেষ্টা করছে।’

‘যারা নিজদলীয় কর্মীকে হত্যা করে জাতি তাদের কাছে নিরাপদ নয়। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব মুখে নীতিবাক্য বললেও দেশ তাদের হাতে নিরাপদ নয়। এরা সুযোগসন্ধানী, সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই বিষধর সাপের মতো এরা ফুঁসে উঠবে। দেশকে আবারো দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করবে। কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না, দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান নেতৃত্ব দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করতে পারবে না।’

দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত একটি সুখি-সমৃদ্ধ মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ঢাকা সিটির মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত অঞ্চল ঢাকা-৪ সংসদীয় এলাকা।’ এই এলাকাকে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত করে আধুনিক ঢাকার প্রতিচ্ছবি দিতে তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, ঢাকা-৪ সংসদীয় এলাকার সচেতন জনগণ যদি সুযোগ দেয় তবে এই এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধার্থে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নাগরিক সেবাসহ সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। ঢাকা-৪ সংসদীয় এলাকাকে মাদক ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ মুক্ত করে শান্তি নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি একটিবারের জন্য স্থানীয়দের কাছে সুযোগ চান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কদমতলী পশ্চিম থানা আমির মো: কবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগরীর সমাজকল্যাণ সম্পাদক পল্টন থানা আমির শাহীন আহমেদ খান, শ্যামপুর-যাত্রাবাড়ী থানা আমির মাওলানা যাকীর হোসাইন, শ্যামপুর দক্ষিণ থানা আমীর কামরুল হাসান প্রমুখ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে শ্যামপুর-কদমতলী জোনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে কর্মহীন বেকার পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে রিকশা ও একজনকে ভ্যান উপহার দেয়া হয়।

সুবিধাভোগীরা জামায়াতে ইসলামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, দু’দিন আগেও তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিতায় ভুগছিলেন। আজ জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়নে তাদের কর্মের ব্যবস্থা হওয়ায় তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। বিজ্ঞপ্তি।