জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তিনি জানান, উচ্চ কক্ষ সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার ঐকমত্য কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা জানান।
দীর্ঘদিন ধরে চলা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের আলোচনায় এবার কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। আলী রীয়াজ জানান, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রতি সমর্থন থাকলেও, উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু দল ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার পক্ষে, আবার কেউ কেউ আসনের সংখ্যানুপাতে গঠনের প্রস্তাব করেছেন। যেহেতু এ বিষয়ে দলগুলো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, তাই উচ্চ কক্ষ সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার ঐকমত্য কমিশনের উপর অর্পণ করা হয়েছে। কমিশন আগামী দিনগুলোতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরকে কাঠামো পরিবর্তনের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটা কোনো না কোনোভাবে পালন করতে হবে। কিন্তু এটা কমিশনের একমাত্র দায়িত্ব নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে সকলে মিলে আমাদের এক জায়গায় আসা। কেননা, ঐকমত্য কমিশনের কোনো ব্যর্থতার জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সহযোগিতার জায়গায় আছি। আমাদের সকলে মিলে সাফল্য অর্জন করতে হবে। এর কোনো ব্যতিক্রমের জায়গা আমাদের সামনে নেই। যেহেতু আমরা একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই জায়গায় আসছি। রাজনৈতিক দলগুলো এখানে এসেছেন। তারা নিঃসন্দেহে এটা উপলব্ধি করবেন। তারা উপলব্ধি করছেন, সহযোগিতা করছেন। অতএব, আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
এছাড়া, দেশের গণআন্দোলনে, বিশেষ করে গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে সাংবিধানিকভাবে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছে কমিশন।
সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠিত না হলে অথবা গঠিত হওয়া পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমর্থন প্রয়োজন হবে। তবে কিছু সুনির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ, যেমন প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (অনুচ্ছেদ ৫৮ক, ৫৮খ এবং ৫৮ঙ) সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কমিশন আশা করছে, আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কিভাবে নিযুক্ত হবেন, সে বিষয়ে একটি সমাধান আসবে।’