বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আপসহীন যুদ্ধ চলবে। যে অপরাধ করবে, সে অপরাধী। তার বিচার হতে হবে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য সবার প্রাপ্য অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় পূর্ব লন্ডনের হোয়াটচ্যাপেল রোডস্থ হায়াত প্যালেস হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ওসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণভোট, পরবর্তী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
গণভোটের বিষয়ে অবস্থান প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘গণভোটের বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, গণভোট আগে হতে হবে। অন্যথায় এটা মূল্যহীন। পরে হলে এর দুই পয়সার মূল্য নেই।’
ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জামায়াতের পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দেশে ভয়ানক সমস্যা। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং সেটি কাজে প্রমাণ করে দেয়া হবে।’
প্রবাসীদের অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির বড় চালিকা শক্তি। প্রবাসীদের অধিকারের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। প্রবাসীরা যাতে তাদের ভোটার অধিকার পান এ বিষয়ে আমরা সবসময় সোচ্চার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আল্লাহ পরিবেশ অনুকূলে নিয়ে আসায় আমরা প্রবাসীদের প্রত্যেকটি অধিকার নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে জোরাল ভাবে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট কথা হচ্ছে, যাদের প্রেরিত অর্থে দেশের অর্থনীতির ভীত মজবুত হয়, তাদের ভোটের বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই।’
হানাহানির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা হানাহানি করি, আপনারা করিয়েন না। আপনারা ভালো থাকেন। আপনারা মাঝে মাঝে ভূয়া ফটোকার্ড দিয়ে হানাহানি লাগাইয়া দেন। তারপর আমরা যখন প্রতিবাদ করি, তখন তারা ডিলিট করে। ডিলিট তো সমাধান না। এরই সময়ে ভুল তথ্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। সাংবাদিকদের মাঝে যেমন দায়িত্বশীল সাংবাদিক আছেন, তেমনি তাদের কেউ কেউ সমাজকে বিপদে ফেলে দেন।’
গুম-খুনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার প্রসঙ্গে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেকোনো অপরাধের বিরুদ্ধে। এটা কে করল- সেনাবাহিনীর লোকেরা করল, নাকি অন্য কেউ সেটা ম্যাটার করে না। আমাদের কাছে অপরাধ যে করবে সে একজন অপরাধী। এই কথাগুলো যত জায়গায় বলার দরকার আমরা বলেছি।’
ডা: শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ফেরার পথে লন্ডনে যাত্রাবিরতিকালে এই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে শেষ করেই তিনি লন্ডন থেকে লুটন শহরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে জুমার নামাজ শেষে একটি সভায় যোগ দেবেন। এরপর বার্মিংহ্যাম ও লেস্টার সিটিতে আরো দু’টি সভায় অংশগ্রহণ করা কথা। শনিবার সকালে তিনি হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) এর জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, কুড়িপ্রাম-৩ (উলিপুর) এর জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়
এদিন সকাল ১০টায় জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান ব্যবসায়ীদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যাতে নিরাপদে দেশে ব্যবসা করতে পারেন জামায়াতে ইসলামী দেশের মানুষকে এ টুকু আস্বস্ত করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী দেশে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ করেনি এবং ভবিষ্যতে জনগণের সেবা করার সুযোগ পেলে ব্যবসায়ীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার খর্ব হয় এমন কাজও করবে না। জামায়াত ইসলামী দেশে বিনিয়োগের এমন পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যেখানে কোনো ব্যবসায়ীকে তার কাজের জন্য এক পয়সাও কাউকে অন্যায়ভাবে দিতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ হোক। বিদেশীরা দেশে এসে খোলা মনে বিনিয়োগ করুক এবং সেই সাথে আমাদের প্রবাসী ব্যবসায়ীরাও তাদের বিনিয়োগ করে সম্মানের সাথে ব্যবসা করুন। ঘুষ, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আমরা সুন্দর একটি দেশ গড়তে চাই।’
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারলেল উপস্থাপনায় ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট রফিক হায়দারের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গোলাম মর্তুজা, ক্যাপ্টেন কিবরিয়া, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।



