বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ‘জুলাই’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান : প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি ভার্সনের মোড়ক উন্মোচন এবং শহীদ স্মৃতি তথ্য সম্বলিত ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অর্থসহ পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কুরআন তিলাওয়াতের পর নাতে রাসূল পেশ করা হয়। ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের তথ্য সংগ্রহের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সেমিনারে ‘জুলাই’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সভাপতির ভাষণে জাতীয় সেমিনারে উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা, জাতীয় নেতা, বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, উলামায়ে কেরামসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি। মানুষের উপর মানুষের গোলামী খতম করে আল্লাহর গোলামী কায়েম করার জন্য আমাদের আবার তৃতীয় বার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। জাতীয় সংসদে আল্লাহর আইন পাশ করতে হবে। মানুষের রচিত কোন মতবাদ দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না। এজন্য এ দেশে আল্লাহর আইন চালু করতে হবে।
সেমিনারে আলোচ্য বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল ও জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির জনাব সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মো: আব্দুর রব ও মোবারক হোসাইন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এম এ আজিজ হাওলাদার, সহ-সভাপতি জাফর ইকবাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক খান আসাদ, শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রমুখ।
সেমিনার যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরো বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যারা জীবন দান করে তারা শহীদ। আল্লাহ তায়ালা শহীদদেরকে বিরাট পুরস্কারে ভূষিত করবেন। গত বছর জুলাই-আগস্টে যারা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে তারা সবাই শহীদ। শহীদ ও আহতদেরকে সর্বোত্তম পুরস্কার দেয়ার জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে। তাহলেই আমরা দুনিয়া এবং আখিরাতে শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করবো।’ আল্লাহর বিধান কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
আগামীকাল শনিবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের হৃদযন্ত্রে বাইপাস অপারেশন করা হবে ইনশাআল্লাহ। তার সফল অপারেশন এবং দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া করতে তিনি দেশবাসী এবং বিদেশে অবস্থানরত সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জামায়াত আমিরকে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বলেন- আমাদের দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তিনি দেশেই চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে আওয়ামী লীগ জাতির ওপর শোষণ, জুলুম, নির্যাতন, লুটপাট চালিয়েছে। লাখ লাখ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। আবার ৯০ সালের গণঅভুত্থানের পরে আরেকটি দল ক্ষমতায় এসে লুটপাট, চাঁদাবাজি করেছে। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। তাই এবার আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লুটপাট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করি। ইসলাম কায়েম করা ছাড়া লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দেশে দুর্নীতিমুক্ত সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। তা-না হলে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী শহীদদের তালিকা করার জন্য তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হলে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুসলমানদেরকে জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করে তাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। জামায়াত-শিবির ও মসজিদের ইমামদেরকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।’
বর্তমানে একটি দলের মহাসচিব বলেছেন, দেশে দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হইলে তাতে তাদের সমস্যা কি? দক্ষিণপন্থার ভয় দেখিয়ে আবার জুলুম-নির্যাতন চালানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলো। কিন্তু আজকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই শহীদরা কোনো দলের নয়। তারা গোটা জাতির গর্ব। কাজেই শহীদ পরিবারের লোকদেরকে চাকরি দেয়া, আহতদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা সরকারের দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইর গণহত্যা, বিডিআর সদর দফতরে সেনা অফিসারদের হত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করাসহ হাসিনার আমলে সংঘটিত সকল হত্যার বিচার করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের কোনো ক্ষমা নেই।’ প্রেস বিজ্ঞপ্তি