সড়ক উপদেষ্টা

৭২ বছর বয়সে সেফ এক্সিট ভাবা সত্যিই দুঃখজনক

এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা। তাই তার বক্তব্যের ওপর মন্তব্য করা শোভন নয়।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান |সংগৃহীত

‘৭২ বছর বয়সে যদি আমাকে সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়’- এমন মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ‘উপদেষ্টার রোজনামচা, চালকের হেলমেট নাই, ও সেফ এক্সিট’ শিরোনামে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা লেখেন।

পোস্টে তিনি জানান, গতকাল সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনযোগে ভৈরব যান। সফরসঙ্গী ছিলেন যাতায়াত খাত বিশেষজ্ঞ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. মইনুদ্দিন, রেল ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জেলা ও উপজেলা পরিষদ এবং পুলিশের কর্মকর্তারা। ট্রেনে ওঠার আগে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন এবং যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ভৈরব পৌঁছে গাড়িতে আশুগঞ্জ ট্রেন স্টেশন পরিদর্শন করেন। সেখানে বিএনপি, জামায়াতসহ স্থানীয় জনগণের সাথে মতবিনিময় করেন। স্থানীয়দের দাবি ছিল, স্টেশনটিকে আগের মতো বি-শ্রেণিভুক্ত করা এবং সিগন্যালিংসহ অন্যান্য ত্রুটি নিরসন। তিনি রেলের মহাপরিচালককে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।

মোটরসাইকেল চালকের হেলমেট না থাকা প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, সরাইলের পথে সাত-আট কিলোমিটার এলাকায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পরও অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমে পায়ে হেঁটে এবং পরে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দেন। কিন্তু চালক কিংবা যাত্রীর কারোরই হেলমেট ছিল না। আট-দশটি মোটরসাইকেল খুঁজেও মাত্র একটি হেলমেট পাওয়া যায়। চালকের জন্য হেলমেট না পেয়ে নিজেই সেটি পরে যাত্রা করেন। হেলমেটবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে পরামর্শ দেন এবং বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

সরাইল বিশ্বরোডে যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্মাণকাজের পাশাপাশি চালকদের শৃঙ্খলাবোধের অভাব ও হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রায় বিলম্ব হচ্ছে। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ঠিকাদার চলে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তবে তাদের ফিরিয়ে এনে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। দুই লেনের মূল রাস্তার পাশে সার্ভিস লেন থাকলেও যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় যানজট বাড়ছে। ডিভাইডার ভেঙে গাড়ি উঠে গিয়ে কোথাও দুই লেন তিন-চার লেনে পরিণত হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ সক্রিয় থাকলে এমন পরিস্থিতি হতো না। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপির সাথে কথা হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথেও আলোচনা করবেন বলে জানান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সাথে পরামর্শক্রমে অবিলম্বে রাস্তা সংস্কারে ছয়টি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ ১২ জন কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদস্থ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত এ রাস্তায় চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হবে।

ফেরার পথে এক সাংবাদিক সেফ এক্সিট বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা। তাই তার বক্তব্যের ওপর মন্তব্য করা শোভন নয়। তাছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করি না।

তিনি আরো লেখেন, উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমার রোজনামচা এমনই। গতকালও রাত ৮টায় বাসায় ফিরেছি। নিজে পদে থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কাউকে ব্যবসা বা চাকরি দেইনি। নিজের সীমিত সামর্থ্যের সবটুকু ব্যবহার করে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছি। যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ থাকলেও গ্রহণ করিনি।

পোস্টের শেষাংশে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লেখেন, তাই, আজ ৭২+ বছর বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়।