জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না বলে মনে করছে নেজামে ইসলাম পার্টি। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সভায় এমন মন্তব্য করেন দলটির নেতারা।
দলটির নেতারা বলছেন, জুলাই বিপ্লব ও জুলাই সনদ পরস্পর সম্পৃক্ত। ফলে ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমকে কোনো প্রশ্নের মুখে ফেলা মানে বিপ্লবকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা। সেজন্য ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমকে প্রশ্নাতীত রাখতে হবে।
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত নতুন গেজেটে ধর্মীয় শিক্ষকের বদলে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টিকে ‘ইসলামবিরোধী অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়নের ঘৃণ্য অপচেষ্টা বলে মন্তব্য করা হয়। একইসাথে অবিলম্বে এ নিয়োগ বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের গেজেট প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়।
পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আমিরে নেজাম আল্লামা সরওয়ার কামাল আজিজী।
প্রাচীনতম ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে গভীর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থেকে দেশকে অকার্যকর ও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। এ ব্যাপারে সকলকে সর্বাত্মক সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক বিভাজন থাকলেও ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী পতিত শক্তির প্রেতাত্মাদের নির্মূল করতে হবে।
সভায় বলা হয়, সম্প্রতি ভিপি নূরের উপর হামলার ঘটনা ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরেও স্বাধীনতাকামী ও দেশপ্রেমিক জনতার কণ্ঠরোধের এক পৈশাচিক প্রয়াস। এ ঘটনা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। যা সরকারের মদদে আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টার শামিল। কাজেই ফ্যাসিবাদের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী দোসরদের রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় জনরোষ ভয়াবহ রূপ নেবে, জনগণ রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে।
আমিরে নেজাম আল্লামা আজিজী বলেন, ‘ইসলামে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ। তাছাড়া সঙ্গীত কোনো মৌলিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশের মতো মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে মুসলিম অভিভাবকদের মতামত না নিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীত শিক্ষা চাপিয়ে দেয়ার অধিকার কোনো সরকারের নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এলজিবিটি ও গানবাদ্য ঢুকিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিম শিশু-কিশোরদের ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে রাখার ডি-ইসলামাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমল থেকেই ছিল। আর সেই পুরোনো ইসলামবিরোধী অ্যাজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নে নেমেছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চেপে বসা পাশ্চাত্যের উচ্ছিষ্টভোগী কিছু সুশীল এনজিওকর্মী। সুতরাং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোনোভাবেই জাতি বিধ্বংসী এমন সিন্ধান্ত মেনে নেবে না।’
মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার বলেন, বহুল কাঙ্ক্ষিত জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া গত (১৬ আগস্ট) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যাতে সাংবিধানিক ও আইনি বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলে খসড়ায় প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সনদের পটভূমি, রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি বিষয় এবং বাস্তবায়নের আটটি অঙ্গীকারনামা রয়েছে। তবে বাস্তবায়ন কিভাবে হবে সে কথা উল্লেখ নেই। যা হতাশার বার্তা দেয়। ‘সনদকে আরো গভীরভাবে দেখতে হবে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে। এটি সঠিকভাবে করা গেলে যথার্থ মূল্যায়ন হবে। অন্যথায় এটি শুধুই একটি কাগজ হিসেবে থাকবে।
এ সময় তিনি ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেয়া হবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, নায়েবে আমির আব্দুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান মাহমুদী, মাওলানা ডা. মুহাম্মদ ইলিয়াস খান, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন হাবিব, সহকারী সংগঠন সচিব (চট্টগ্রাম) মাওলানা ইনআমুল হক কুতুবী, সহকারী অর্থ সচিব আনওয়ারুল কবির, প্রচার সচিব মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসউদ খান।
বক্তব্য রাখেন দফতর সচিব মুফতী দ্বীনে আলম হারুনী, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সচিব মুফতি শরীফুর রহমান, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সচিব শাকিরুল হক খান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সচিব মাওলানা শাহজাহান ইসলামাবাদী, সংস্কৃতি সচিব অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন, সাহিত্য সচিব মাওলানা জিয়াউল হুসাইন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচিব মাওলানা ফজলুল করিম জিহাদী, যুববিষয়ক সচিব অধ্যাপক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ছাত্রবিষয়ক সচিব মাওলানা মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর, নির্বাহী সদস্য মুফতি ওয়াহিদুজ্জামান, মুফতি আতিকুর রহমান সিদ্দিকী, ইহতেশামুল হক সাখী, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আতাউল্লাহ হুসাইনী, মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রব্বানী, মাওলানা জুনাইদ বিন জালাল।
আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা নুরুল হক চকোরী, ড. মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা হাবিবুল্লাহ কাসেমী, মুফতি মাসুম বিল্লাহ আনওয়ারী, মাওলানা জুবাইর আহমদ খান, ইসলামী ছাত্রসমাজ সভাপতি বিএম আমীর জিহাদী প্রমুখ।