ডা. শফিকুর রহমান

আওয়ামী লীগ দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল

আওয়ামী লীগ গোট দেশকেই নরকে পরিণত করেছিলো। জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা এবং আয়না ঘরের নির্যাতনসহ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করার মাধ্যমে পুরো দেশকেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছিলো।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
রাজধানীর মিরপুরে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় শাখা-২ মাঠে সমর্থক গোষ্ঠী  আয়োজিত  ঢাকা-১৫ আসনের প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান
রাজধানীর মিরপুরে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় শাখা-২ মাঠে সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত ঢাকা-১৫ আসনের প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান |সংগৃহীত

প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী অপশসান-দুঃশাসনে দেশকে অপরাধ ও অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে জনগণের ওপর নির্মম ও নিষ্ঠুর জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুরে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় শাখা-২ মাঠে সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত ঢাকা-১৫ আসনের এক প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

কাফরুল দক্ষিণ থানা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ আনোয়ারুল করিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আবু নাহিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী ইঞ্জিনিয়ার ফোরামের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবিদ হাসান, ঢাকা-১৫ আসনের সদস্য সচিব ও মিরপুর পূর্ব থানা আমির শাহ আলম তুহিন, কাফরুল জোনের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, কাফরুল উত্তর থানার আমির রেজাউল করিম মাহমুদ, ছাত্রশিবিরের মহানগরী পশ্চিম শাখার সভাপতি হাফেজ আবু তাহের, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি পশ্চিম শাখার সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কাফরুল পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত আমির আতিক হাসান রায়হান, ভাসানটেক থানার আমির ডা. আহসান হাবীব, জোনের টিমের সদস্য আলাউদ্দিন মোল্লা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কাফরুল জোন পরিচালক মিজানুর রহমান, মাহমুদ হাসান, সালাউদ্দিন শাহিন ও মেসবাহ উদ্দিন মাহিন প্রমুখ ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মাত্র এক শতাব্দীর মধ্যে আমরা দুই বার স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসক থেকে মুক্ত হয়ে আমরা পাকিস্তান লাভ করেছিলাম। কিন্তু শাসকচক্রের ব্যর্থতার কারণেই পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। তাই ১৯৭১ সালে এক রক্তাক্ত মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা লাভ করেছি। সে যুদ্ধে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত নানাভাবে সহযোগিতা করেছিল। তারা এটাকে সুযোগ মনে করে লুফে নিয়েছিল। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মরহুম জেনারেল এজি ওসমানীকে আসতে না দিয়ে তাকে আগরতলায় আটকে রাখা হয়েছিল। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পাকবাহিনী বিপুল সংখ্যক যুদ্ধাস্ত্র ফেলে গেলেও ভারতীয়রা সবই লুট করে নিয়ে যায়। তারা ৫৪ বছরে আমাদেরকে একটা গুলির খোসাও ফেরত দেয়নি। এমনি ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক আমাদের খাদ্য গুদাম লুটপাটের প্রতিবাদ করায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মরহুম মেজর জলিলকে স্বাধীন দেশে সবার আগে কারাবরণ করতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু তারা দেশে সুশাসন উপহার দিতে পারেনি বরং তারা দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলো। শেখ মুজিব নিজেই খোদোক্তি করে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার পর অন্যরা পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি’। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। সিরাজ শিকদারসহ ৩০ হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিলো। রাষ্ট্রায়ত্ব মাত্র ৪টি পত্রিকা বাদে সকল পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছিল। তাই এক অনিবার্য বাস্তবতায় আওয়ামী-বাকশালীদের দুঃখজনক পতন ঘটেছিল। মূলত, আসমান যখন কথা বলে, তখন জমিনের সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ থেকে মোটেই শিক্ষা গ্রহণ করেনি বরং তারা পাতানো ও সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘ পরিসরে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। ফলে জুলাই বিপ্লব অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মূলত, জুলাই বিপ্লব দেশ ও জাতির জন্য বড় অর্জন। গত বছরের আন্দোলন সফল করতে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪শরও বেশি মানুষ শাহাদাত বরণ করেছেন। রাজপথে অকাতরে জীবন দিয়েছে আবু সাঈদের মত জাতীয় বীররা। গুলির মুখে দাঁড়িয়ে শহীদ আবু সাঈদ বলেছিলেন, ‘বুকে আমার অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। শেষ পর্যন্ত গুলিতেই তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তিনি আওয়ামী অপশাসন-দুঃশাসনের সংক্ষিপ্ত খতিয়ান দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ গোট দেশকেই নরকে পরিণত করেছিল। জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা এবং আয়না ঘরের নির্যাতনসহ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করার মাধ্যমে পুরো দেশকেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছিলো। আর এর অবসান ঘটে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে। তিনি অর্জিত বিপ্লবকে অর্থবহ করতে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।