বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ‘নতুন মোড়কে পুরাতন মতবাদ জনগণ আর গ্রহণ করবে না। ভোট চাইতে আসলে প্রশ্ন করতে হবে; দেশ কীভাবে দুর্নীতিতে টানা ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছে।’
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর জিগাতলায় ঢাকা-১০ আসনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ পূর্বক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ‘যারা সরকারে থেকে দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে, কানাডায় বেগমপাড়া গড়েছে, লন্ডনে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তারা এখন যতই নীতি কথা বলুক এসব কেবলই জনগণকে ধোঁকা দিয়ে আবারও ক্ষমতার মসনদে বসার অভিনয়।’
‘কথার ধোঁকায় পড়ে জনগণ আর ভোট দিবে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণ এবার ভোট দিবে দলীয় কর্মকাণ্ড দেখে। কারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, দখল, লুটপাট করছে আর কারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে জনগণ সবই দেখে এবং জানে। ক্ষমতায় বসার আগেই যারা নদীর বালু,পানি, পাথর লুট করে নিয়ে গেছে তাদের হাতে কখনো দেশ ও জাতি নিরাপদ নয়। তাই দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের ভোটের মাধ্যমে বয়কট করতে হবে।’
তিনি প্রত্যেক ভোটারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতার পরবর্তী বিগত ৫৪ বছরে মানুষের মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে কেন পারেনি যারা অতীতে সরকারে ছিল তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামী ব্যক্তি ও দল হিসেবে দুর্নীতিমুক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছে। তাদের দায়িত্ব পালনকালে ২ টাকার দুর্নীতি হয়েছে এমন প্রমাণ কেউ করতে পারেনি। তারা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে রাষ্ট্রের ১ পয়সা দুর্নীতি করেছি তবে শুধু মন্ত্রীত্ব নয় জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নেবো। তাদের সেই চ্যালেঞ্জ আজ পর্যন্ত কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। কারণ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। জামায়াতের নেতারা এক আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না। যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী করে না, জনগণের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে না।’
জামায়াতে ইসলামীকে একটিবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে জনগণের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী জাতিকে বৈষম্যহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র উপহার দিতে চায়।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, ‘যেই অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ ৫৪ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে, সেই অঙ্গীকার ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মানুষের মৌলিক পাঁচটি অধিকারের মধ্যে একটিও রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত হয়নি। জনগণের মৌলিক অধিকার সরকার নিশ্চিত করতে না পারলে সেই সরকার কখনো জনগণের সরকার হতে পারে না। বিগত সময়ে যারাই সরকারে ছিল তারা কেউ জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেনি। কারণ তারা জনগণের সরকার ছিল না। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মানুষের মৌলিক পাঁচটি অধিকার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করবে।’
তিনি ঢাকা-১০ আসনের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘একটিবার জামায়াতে ইসলামীকে সুযোগ দিন। আমরা জনগণের আমানতের খেয়ানত করব না। আমিরে জামায়াত ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা দুর্নীতি করব না; কাউকে দুর্নীতি করতে দেবো না, আমরা চাঁদাবাজি করব না; কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেবো না, আমরা সন্ত্রাসী করব না; কাউকে সন্ত্রাসী করতে দেবো না। আমরা এমনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করব ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে হবে না। ক্ষমতায় থাকলেও আমরা জনগণের সাথে থাকব, ক্ষমতায় না থাকলেও আমরা জনগণের সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালক অধ্যাপক নুর নবী মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সহকারী পরিচালক শেখ শরীফ উদ্দীন আহমদ, হাজারীবাগ উত্তর থানা আমির মাহফুজ আলম প্রমুখ।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ধানমন্ডি জোন টিম সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন তালুকদার, কাউন্সিলর প্রার্থী যথাক্রমে আসলাম হাকিম, গোলাম মোস্তফা ও একরামুল হক, কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম থানা আমির মুজিবুর রহমান খান, নিউ মার্কেট থানা আমির মাওলানা মহিব্বুল হক ফরিদ, ধানমন্ডি থানা আমির হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, কলাবাগান পূর্ব থানা আমির জাহিনুর রহমান, কলাবাগান পশ্চিম থানা আমির মাহবুবুর রহমান, হাজারীবাগ দক্ষিণ থানা আমির আখতারুল আলম সোহেল সহ ঢাকা-১০ সংসদীয় এলাকার সাংগঠনিক বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।
সভা শেষে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে ঢাকা-১০ সংসদীয় এলাকায় দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে নেতৃবৃন্দ গণসংযোগ করেন। এসময় বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানের মালিক-কর্মচারী এবং পথচারীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়।