সাক্ষাৎকারে যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না

তারেক রহমানের হাত ধরে যুব সমাজ এগিয়ে যাবে

বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন খুবই জরুরি। নির্বাচন মানুষের গণতান্ত্রিক প্রধানতম অধিকার।

অসীম আল ইমরান
যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না
যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না |সংগৃহীত

মোনায়েম মুন্নার বাড়ি লক্ষীপুরে হলেও জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ১৯৮৫ সালে ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৯০ সালে এরশাদ পতনের আন্দোলনে তিনি ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত। সবশেষ ২০২২ সালে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে ছিলেন। চলমান রাজনীতি, যুবসমাজ নিয়ে বিএনপির চিন্তা ও সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকার নিয়েছেন- অসীম আল ইমরান।

যুবদলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মোনায়েম মুন্না : ‘বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন খুবই জরুরি। নির্বাচন মানুষের গণতান্ত্রিক প্রধানতম অধিকার। নির্বাচিত সরকারের যে দায়বন্ধতা থাকে অন্য কোনো সরকারের থাকে না। ভোটের জন্য জনপ্রতিনিধিদের মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হয়, সেজন্য তার একটা দায়বদ্ধতা থাকে। কারণ ৫ বছর পর তাকে আবারো জনগণের কাছে যেতে হবে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের কোনো দায়বন্ধতা থাকে না। সেই জায়গা থেকে যুবদলের আকাঙ্ক্ষা একটি গণতান্ত্রিক সরকার। এই গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে যুবদল নেতৃত্ব দেবে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যুবসমাজ যে ভূমিকা রাখে, আগামী দিনেও আমরা সেভাবে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।’

বর্তমান পেক্ষাপটে রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে আপনারদের মুল্যায়ন কী?

মোনায়েম মুন্না : ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করছেন। জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তার পথেই আছেন তারেক রহমান। সততা ও দেশপ্রেমের জায়গা থেকেই তার প্রমাণ রেখে চলেছেন। তিস্তার পানি ও ভারতীয় দূতাবাস হামলার প্রতিবাদে আমরা তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করেছি। কিন্ত অন্য কোনো দল করতে পারেনি। সুতরাং আমরা জনগণের পাশে থেকেই আওয়াজ তুলছি এবং বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবছি। জিয়াউর রহমান ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’কে ভালোবেসে ছিলেন, আর তারেক রহমান বলেছেন ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। তিনি বাংলাদেশ ধারণ করছেন এবং আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।’

যুবদলের নেতাকর্মীদের কিছু কাজ সমালোচিত হয়েছে এটা এড়ানো যেত কিনা?

মোনায়েম মুন্না : ‘দলের কোনো নেতা-কর্মী অন্যায় করলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। কখনো অস্বীকার করছেন না। যুবদলের কেউ জড়িত থাকলে সাথে সাথে তিনি আমাদের সরাসরি জানাচ্ছেন এবং আমরা তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তদন্ত কমিটির মাধ্যমেও তদন্ত করছি। সম্প্রতি গাজীপুরের জাহাঙ্গীর নামে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে আমরা তাকে বহিষ্কারের পাশাপাশি মামলাও করেছি। আমরা প্রত্যেক জায়গায় ব্যবস্থা নিচ্ছি। যুবদলের নেতা-কর্মীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখছেন তারেক রহমান। আমি ৪০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছি এবং আমার জায়গা থেকে দলের দায়িত্ব পালনের জন্য সবোর্চ্চ চেষ্টা করছি।’

যুবদলের সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা?

মোনায়েম মুন্না : ‘বিগত সময়ে বিএনপির বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বির্তকিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির অনেক প্রোপাগান্ডা রচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে মিডিয়া স্বীকার করেছে, তাদেরকে বিএনপির বিরুদ্ধে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছিল তা ছাপানো ভুল ছিল। বিশেষ করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচার করা নিউজগুলো মিথ্যা ছিল আজকে প্রমাণিত হচ্ছে। আজকে আবারো বিএনপি ও যুবদলকে মিডিয়া ট্রায়ালের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

জেলা-মহানগরে দলীয় নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা?

মোনায়েম মুন্না : ‘দফতর থেকে যুবদলের নেতা-কর্মীদের মনিটরিং করা হচ্ছে। যেখানে সমস্যা দেখছি সেখানে সরাসরি আমি কথা বলছি। অনেক জায়গা দেখেছি, মিডিয়া মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। যুবদল করে না অথচ বলছে যুবদল কর্মী। দলের কর্মী পরিচয়ে কেউ অন্যায় করলে তো আমরা গ্রহণ করব না।’

যুবদলের নেতা-কর্মীরা দলীয় কমান্ড মানছেন না কেন, কারণ কী?

মোনায়েম মুন্না : ‘মানুষের মধ্যে ভালোমন্দ মানুষ রয়েছে। এত বড় রাজনৈতিক দলে কিছু খারাপ মানুষ তো থাকতেই পারে। একটা পরিবারের মধ্যেও সবাই শতভাগ ভালো হয় না। তবে যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে তাদেরকে কাউকে আমরা ছাড় দিচ্ছি না। তাৎক্ষণিক শাস্তির আওয়তায় নিয়ে আসছি। আগে আওয়ামী লীগ সরকার অস্বীকার করেছে তবে আমরা তো স্বীকার করছি। আমরা চেষ্টা করছি।’

বর্তমানে আপনাদের চাওয়া কী?

মোনায়েম মুন্না : ‘দেশের সর্বস্তরের মানুষের এই মুহূর্তে চাওয়া- একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। কে দেশ চালাবেন এটা নির্ধারণ করবে জনগণ। বাংলাদেশকে সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জনগণ বিএনপিকে আস্থার জায়গায় রেখেছে। আশা করি, জনগণের ভোটের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অসীন হলে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে উন্নিত করতে পারবেন।’

জেলা-মহানগরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হলেও যুবদলের কমিটি কেন হয় না?

মোনায়েম মুন্না : ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে সম্মেলন করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তারপরও আমরা ভোটাভোটির মাধ্যমে লালমনিরহাট, সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করেছি। আজকে আবার গণতন্ত্র উত্তরণে আরেক ধরনের বাধা আসছে। আগে উন্নয়ন উন্নয়ন বলতো, আর তারাই এখন বলছে সংস্কার সংস্কার। মানে নির্বাচনকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলছে সেকেন্ড রিপাবলিক। দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের সেকেন্ড রিপালিক সম্পর্কে ধারণা নেই। জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীকে পুর্নবাসন করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

দীর্ঘদিন যুবদলের কমিটি নেই, আপনার ওপর কোনো চাপ আছে কিনা?

মোনায়েম মুন্না : ‘আমার ওপর কোনো ধরনের পেশার নেই। স্বচ্ছতার সাথে কাজ করছি। ফেনী, দিনাজপুর, খুলনা জেলা ও মহানগর, যশোর জেলাসহ ইতোমধ্যে অনেক কমিটি গঠন করেছি। সব জায়গায় মতামতের ভিত্তিতে মাঠের নেতৃত্বকে কমিটিতে আনার চেষ্টা করেছি। শিগগিরই যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি আসতে পারে।’

যুবসমাজ-তরুণ্যদের নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

মোনায়েম মুন্না : ‘৩১ দফার মাধ্যমে আমাদের বার্তা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরিবারভিত্তিক ‘ফ্যামিলি কার্ডের’ কথা বলেছেন। যুবসমাজের ভাবনা নির্বাচনের আগেই আমরা জাতির সামনে তুলে ধরব। ইতোমধ্যে আমরা ১৮ মাসে ১ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থানের কথা বলেছি। তাদের কাজে-কর্মে সম্পৃক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য এবং হাইকমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করব। সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়াসহ বিদেশে শ্রমবাজারে দক্ষ জনবলের প্রচুর চাহিদা। ফলে উন্নত ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।’

দেশের এক কোটি যুবক মাদকাসক্ত, তাদের নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

মোনায়েম মুন্না : ‘যুবসমাজকে কাজ-কর্মে ব্যস্ত রেখে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারলে মাদকাসক্তদের নিয়ে আলাদা কর্মপরিকল্পনা দরকার নেই। মাদক চোরাচালান লাইন ও কেনা-বেচার সিস্টেম বন্ধ এবং পর্নসাইট বন্ধ করা যায় তাহলে তরুণ সমাবেশের মধ্যে মাদকাসক্তের পরিমাণ কমে আসবে। মাদকের সাথে সীমান্ত কেন্দ্রিক একটি চক্র কাজ করছে, এই লাইন বন্ধ করা জরুরি। এখানে প্রশাসনের লোকও জড়িত রয়েছে। এটা নির্বাচিত সরকার ছাড়া বন্ধ করা সম্ভব না। নির্বাচিত সরকার দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সেটা অন্য কেউ নিতে পারবে না। পৃথিবীর কোনো দেশ শতভাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। কিন্তু সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কমানো সম্ভব। যদি শক্তিশালী প্রশাসন থাকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি সঠিক ভূমিকা রাখে এবং রাজনীতিবিদরা যদি ভূমিকা রাখেন তাহলে কমিয়ে আনা সম্ভব। বিএনপির হাত ধরে, তারেক রহমানের হাত ধরে যুব সমাজ এগিয়ে যাবে।’

ছাত্রদের দু’জন প্রতিনিধি উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছে, এতে নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার কোনো সম্ভবনা দেখছেন?

মোনায়েম মুন্না : ‘উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অতিবিলম্বে ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। এনসিপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুর্নবাসিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার কারণেই লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, মুরাদ নগর, হাতিয়ায় ঝামেলা হয়েছে। বিগত সাড়ে ১৬ বছরে সুশীল সমাজের দুই একজন প্রতিনিধি ছাড়া কিন্তু কেউ জেলে যায়নি। রিস্কেও ছিল না। রাজনীতিবিদরা বেশি রিস্কের মধ্যে ছিল। নেতা-কর্মীরা গুম-খুন হয়েছে, জেল-জুলুম খেটেছে।’

নির্বাচন নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা দেখছেন?

মোনায়েম মুন্না : ‘কোনো কোনো মহল নির্বাচনকে বিলম্বিত প্রলম্বিত করার চেষ্টা করছে। জনগণ এটা মেনে নেবে না। জোর করে ক্ষমতায় থাকার রেজাল্ট কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বারবার প্রমাণ দিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যাকারী অনেক পুলিশ, আমলা এবং ফ্যাসিস্টের দোসররা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। নির্দেশদাতার দেশ থেকে পালিয়ে গেল। গণহত্যার বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। এটা কার দায়িত্ব? যারা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে তাদের। তারা শুধু সংস্কার সংস্কার করছে, কিসের সংস্কার হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’

সর্বশেষ কী বলবেন?

মোনায়েম মুন্না : ‘সবার আগে বাংলাদেশ। উন্নত বাংলাদেশ চাই, যোগ্য নেতৃত্ব চাই, সঠিক নেতৃত্ব চাই। আমি মনে করি, ডিসেম্বররের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আর কালবিলম্ব করার সুযোগ নাই। কারণ জনগণের অধিকারকে খর্ব করা যাবে না। ভোটের অধিকারের জন্য আমরা জেল-জুলুম-হুলিয়া-নির্যাতন মাথা পেতে নিয়েছি। সংস্কার করবেন, করেন। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের সাথে নির্বাচনকে কেন সাংঘর্ষিক করছেন। সংস্কারও চলবে, নির্বাচনও হবে। নির্বাচনকে কেনো ভয় পাচ্ছেন।’