সংস্কারের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম হয়েছে এবং সব সময় সংস্কারের পক্ষে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্’র ৯ম মৃত্যুার্ষিকী উপলক্ষে হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদের উদ্যেগে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা বলেন। গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল আছে, কিছু লোকজন আছে, যারা সমালোচনার জন্য মিথ্যা প্রচারণা করে সেগুলো ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তার মাঝে একটা প্রচার করা হয়— বিএনপির সংস্কার মানে না। কিন্তু আমরা বলব, সংস্কারের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম হয়েছে। বিএনপি সংস্কারের জন্মদাতা।’
তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দানবীয় শক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশটা এখন মুক্ত হয়েছে। মনে হয় আমরা এখন স্বাধীন দেশে আছি। আগে প্রতি মুহূর্তে মনে হতো আমাদের শিকল পড়িয়ে রাখা হচ্ছে। রাতে আমরা ভালো করে ঘুমাতে পারতাম না, পালিয়ে বেড়াতে হতো। মামলা-মোকদ্দমা, জেলে যাওয়া নিত্যনৈমিতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের মা-বোনেরা কেউ নিরাপদ ছিলেন না। এই অবস্থা থেকে আমরা বেড়িয়ে এসেছি। আমাদের অন্তত একটা নিঃশ্বাস ফেলার সময় হয়েছে। আমরা সবাই মিলে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস আমাদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার মানুষ। তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। পৃথিবীর সমস্ত দেশের নেতারা তাকে সম্মান করেন। আমরা সেই জন্যই তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে একটা নিরপেক্ষ উপদেষ্টামন্ডলী তৈরি করেছেন। তিনি বাংলাদেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন। সে নির্বাচনে একটা পার্লামেন্টে জনগণের প্রতিনিধি থাকবেন এবং একটা সরকার পাব— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সরকার আইনশৃঙ্খলা ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেটাকে তিনি (ড. ইউনূস) ঠিক করার চেষ্টা করছেন। যে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, সেটাকে ঠিক করার চেষ্টা করছেন। ব্যাংকগুলো লুট করে সাফ করে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশকে ছোট করে দিয়েছিল। সেই জায়গাটা ঠিক করার চেষ্টা করছেন। তারা চেষ্টা করছেন কিভাবে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের দাবি অনুযায়ী কিছু সংস্কার কাজ তিনি করেছেন। ছয়টা সংস্কার কমিশন করেছিলেন। সংস্কার কমিশনগুলো আলোচনা করে কতগুলো প্রস্তাব দিয়েছিল। সে প্রস্তাবগুলোর উপরে দীর্ঘ ছয় থেকে সাত মাস আলোচনা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া দেশের কাঠামো পরিবর্তন করার জন্য বলেছিলেন। তারেক রহমানও ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। আজকে সরকারের কাছ থেকে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সবগুলো ৩১ দফার মাঝে রয়েছে। ওই সবগুলোর মাঝে আমরা একমত রয়েছি।’
মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দল যখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছিল, তখন যিনি (আ স ম হান্নান শাহ) অকুতোভয়ে সামনে এসে দলকে তুলে ধরেছিলেন, সামনের দিকে দলের কথা আমাদের নেত্রীর কথা, আমাদের নেতার কথা বলে বারবার জেলে গেছেন, একবার আমারো সুযোগ হয়েছিল তার সাথে জেলে যাওয়ার। ঢাকা জেল থেকে কাশিমপুর জেলে এসেছিলাম। তখন আমি দেখেছি তিনি কিরকম একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। তিনি বিএনপি-প্রেমিক ও মানুষকে ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। তার গুণের কথা কোনোদিন বলে শেষ করা যাবে না। তিনি জাতীয় নেতা ছিলেন। তিনি দলের নেতৃবৃন্দকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসতেন। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্ব এবং কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় প্রধান আলোচক ছিলেন কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ড. এম এ কাইয়ুম, হুমায়ুন কবীর খান, বেনজীর আহমেদ টিটু, অধ্যাপক ডা: এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, মজিবুর রহমান, ব্যারিস্টার ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী, ওমর ফাররুক সাফিন, শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ।