নাহিদ ইসলাম

ক্ষমতার জন্য কারো সাথে সমঝোতা করব না

এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের আস্থা এবং সহায়তা। যে সহযোগিতা আমরা সবসময় পেয়ে আসছি। সাধারণ মানুষের সহযোগিতাতেই এনসিপি এতদূর আসতে পেরেছে এবং এনসিপি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে মানুষের আস্থা এবং ভরসাতেই।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক মো: নাহিদ ইসলাম
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক মো: নাহিদ ইসলাম |ইন্টারনেট

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো: নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কোনো ধরনের ক্ষমতার জন্য, আসনের জন্য কারো সাথে সমঝোতা করব না।

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তার অবস্থান পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে যে আমরা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের নিজেদের রাজনীতি নিয়ে জনগণের কাছে যেতে চাই। তবে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার, আমাদের যেসব দাবি রয়েছে সেই দাবি এবং আমাদের নীতি আদর্শের সাথে যদি কোনো দল বা কোনো শক্তি ঐকমত্য পোষণ করে, তাহলে তাদের সাথে আমাদের আলোচনা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা ওপেন রয়েছি। আমরা বলেছি যে আমাদের যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা যদি হয় সেটা একটা নীতিগত এবং আদর্শিক জায়গা থেকে হতে হবে। কোনো ধরনের ক্ষমতার জন্য, আসনের জন্য আমরা কারো সাথে কোনো ধরনের সমঝোতা করব না।

তিনি বলেন, আমরা যদি একটি আসনও না পাই, জাতীয় নাগরিক পার্টি তার যেই আদর্শ, তার যে নীতি, তার যেই লক্ষ্য; সেই লক্ষ্যে অটুট থাকবে। আপনাদের কাছে এবং দেশবাসীর কাছে আমাদের এই অঙ্গীকার আমরা আবারো পুনর্ব্যক্ত করছি। আমাদের এনসিপির যেকোনো প্রক্রিয়া আমরা খুবই স্বচ্ছভাবে নেয়ার চেষ্টা করি, জনগণের কাছে সবসময় আমরা আমাদের বক্তব্য হাজির রাখি। আমাদের পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছতার সাথে এগিয়ে চলছে। ফলে আমরা যদি কারো সাথে কোনো ধরনের জোট বা কোনো ধরনের আলোচনা করি, সেটার জন্য কিন্তু আপনাদের সাথে খুবই খোলামেলাভাবে কথা বলতে প্রস্তুত।

তিনি আরো বলেন, সারাদেশ থেকে আমাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এসেছেন। তাদের সাথে মতবিনিময় করব এবং এর আগের সপ্তাহগুলোতে আমরা দেখেছি যে আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস এবং অনলাইনে প্রচুর দক্ষ, যোগ্য ব্যক্তিরা মনোনয়ন নিয়েছেন। আমরা একটি আহ্বান জানিয়েছিলাম সবার জন্য, শুধু জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের জন্য নয়। যেহেতু জাতীয় নাগরিক পার্টি এখন একটি উদীয়মান দল এবং সাধারণ মানুষের দল, সাধারণ নাগরিকের দল; ফলে আমাদের আহ্বান ছিল সবার প্রতি, যারা নতুন করে রাজনীতি করতে চায়, দেশ গড়তে চায়। যারা একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং যারা কখনো হয়তো ভাবেনি যে সংসদে যাবে, নির্বাচনে দাঁড়াবে।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে যেহেতু সবাই নতুন করে স্বপ্ন দেখছে, আজকে হয়তো আমাদের অনেকেরই এখানে বসে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু আমরা এসে এখানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছি, ফলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে এই নির্বাচনে এরকম অনেক মানুষ রয়েছে, যারা কখনো রাজনীতি বা নির্বাচনের কথা পূর্বে না ভাবলেও এবার তারা সম্ভাবনা দেখছেন। এবার তারা স্বপ্ন দেখছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের স্বপ্নকে এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের সাথে কাজ করতে চায়। তাদের পাশে থাকতে চাই আমরা। ফলে আমরা বাংলাদেশের সেই সৎ, যোগ্য, দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম এবং আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ১৫০০ মানুষ এই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা এসব মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাথে মতবিনিময় করব। তাদের স্বপ্নের কথা শুনব। তাদের দক্ষতা, যোগ্যতার কথা শুনব এবং এনসিপির পক্ষ থেকেও আমরা আমাদের পরিকল্পনার কথা বলব। সর্বোপরি আমরা একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে এখান থেকে ৩০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চাই। সেই ৩০০ আসনের প্রার্থী আমরা চূড়ান্ত করব। এখানে একটা প্রাথমিক যাচাই-বাছাই হবে। পরবর্তীতে আমাদের যে রাজনৈতিক পরিষদ রয়েছে তার কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড হিসেবে তারা কাজ করবে। তারা চূড়ান্ত মনোনয়ন দিবেন এই ৩০০ জন প্রার্থীকে।

তিনি আরো বলেন, এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হলেই আমরা আমাদের তালিকাটি ঘোষণা করতে পারব বলে আশা ব্যক্ত করছি। আমরা দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই যে জাতীয় নাগরিক পার্টি তার স্বপ্ন, তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের আস্থা এবং সহায়তা। যে সহযোগিতা আমরা সবসময় পেয়ে আসছি। সাধারণ মানুষের সহযোগিতাতেই এনসিপি এতদূর আসতে পেরেছে এবং এনসিপি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে মানুষের আস্থা এবং ভরসাতেই।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা খুবই উদ্বেগ জানাচ্ছি যে নির্বাচনের জন্য যেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকার কথা সেই ধরনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা অনেক আগে থেকে এটা বলে আসছিলাম যে বাংলাদেশের যে নির্বাচনী সংস্কৃতি, এখানে জবর দখল, প্রশাসনের দখল এবং টাকার ব্যবহার, কালো টাকার ব্যবহার, মাসল পাওয়ারের ব্যবহার ইত্যাদি আমরা নির্বাচনে সবসময় দেখে এসেছি, শুনে এসেছি। এর আগের সময়গুলোতে এবং এর আগের ফ্যাসিবাদী সময়ে তো মানুষ ভোট দিতেও পারিনি। ফলে এইবারের নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে এবং অনেক তরুণ এবং স্বপ্নবাজ দেশপ্রেমী মানুষেরা সংসদে আসবে এটা আমাদের প্রত্যাশা।