বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট জলপাইগুঁড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।
বাবা ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদারের ঘরে জন্ম নেন বেগম খালেদা জিয়া। প্রকৃত নাম খালেদা খানম এবং ডাক নাম পুতুল। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ভাইয়েরা সবার ছোট। তার পিতামহ হাজী সালামত আলী এবং মাতামহ অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুঁড়ির তোয়াবুর রহমান।
অন্ধকার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ
খালেদা জিয়া এবং জিয়াউর রহমান উভয়েই মাতৃকূলের দিক দিয়ে মীর জুমলার বংশধর। খালেদা জিয়া ছিলেন জিয়াউর রহমানের দূর সম্পর্কীয় খালাতো বোন। জিয়া তার মকবুল নানার কাছে প্রথম শুনেছিলেন খালেদা জিয়ার কথা। শুনেছিলেন তার সেই খালাতো বোনটি দেখতে রাজকন্যার মতো। মকবুল নানা জিয়াকে তার ওই বোনটি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ওকে অন্ধকার রাতে দেখলে মনে হবে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।’ জিয়া তার ছবি মামার কাছেও খালেদা জিয়ার একই প্রশংসা শুনেছিলেন। জিয়ার খুব ইচ্ছে হলো সেই বোনটিকে এক নজর দেখার। একদিন দিনাজপুর যাওয়ার সুযোগ হলো। সেই সুবাধেই জিয়া দেখতে পেলেন খালেদা জিয়াকে। খালেদা জিয়া তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। তাকে দেখে জিয়া তার নানা ও মামার দেয়া বর্ণনার সাথে মিল খুঁজে পেলেন।
ছেলেবেলায় খালেদা জিয়া ছিলেন খুব লাজুক। খুব কম কথা বলতেন। জিয়া খালেদার উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা ও সৌন্দর্যে বিমোহিত হলেন। তখন থেকেই জিয়া তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। তার এই স্বপ্নের কথা তিনি তার ছবি মামাকেও জানিয়েছিলেন। ম্যাট্রিক পাস করার পর একবার মামির কাছে লেখা চিঠিতেও তিনি লিখেছিলেন, ‘সেই দিদিমণিটি কেমন আছে?’ সেই দিদিমণিটিই বেগম খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার বিয়ের ঘটনা সম্পর্কে ১৯৯১ সালে তার বড় বোন সাবেক মন্ত্রী মরহুমা খুরশীদ জাহান হক তার বনানীর বাসায় একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, জিয়া তখন ছিল সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডিএফআই’র অফিসার হিসেবে ওর পোস্টিং হলো দিনাজপুরে। আমরা থাকতাম দিনাজপুরের ঈদগাঁ বস্তি এলাকায় ভাড়াটে বাসায়। দিনাজপুরের চাকরির সময় জিয়া মাঝে-মধ্যে আমাদের বাসায় আসতো। জিয়ার একটি অসম্ভব গুণ ছিল, সে সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারতো। পুতুল মেট্রিক পাস করার পর জিয়া একদিন আমাদের বাসায় এলো। আম্মার কাছে গিয়ে বললো, ‘খালা আমি আপনার জামাই হতে চাই।’ আম্মা হেসে ফেললেন। তখন কিছুই বললেন না। আব্বা বাসায় এলে তাকে বলা হলো জিয়ার কথা। আব্বা বললেন- মন্দ কী! তবে পুতুলের বয়স তো খুব কম। আম্মা এ ঘটনাটি আমার স্বামীকে জানালেন। তিনি সদ্য আমেরিকা থেকে ফিরেছেন। তিনি কিছুতেই রাজি হলেন না। কারণ তার যুক্তি ছিল পুতুলের বয়স খুব কম। মাত্র ম্যাট্রিক পাস করেছে। ডিগ্রি পাস না করা পর্যন্ত বিয়ে কী করে হয়। অন্যদিকে জিয়া সেনাবাহিনীর লোক। এটা নিয়েও আমরা ভাবলাম। প্রথমে প্রায় সবারই অমত ছিল। তবে জিয়াকে আমরা সবাই পছন্দ করতাম। এদিকে জিয়াও বার বার খবর নিতে থাকল। অবশেষে আমরা বিয়েতে সম্মত হই।
খালেদা জিয়ার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার জানান, তার মকবুল চাচা (জিয়ার নানা) আনুষ্ঠানিকভাবে জিয়ার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে মুদিপাড়ার বাসায় জিয়া ও পুতুলের বিয়ে হয়। বিয়ে হয়েছিল অনেকটা তাড়াহুড়ো করে। প্রথমে আকদ হয়েছিল। এক বছর পর ঢাকার শাহবাগ হোটেলে (পিজি হাসপাতাল) তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেয়া হয়।
বিয়ের স্মৃতি বর্ণনা করে মেজ বোন সেলিমা ইসলাম বিউটি জানান, ১৯৬০ সালে আমার বিয়ের কয়েক মাস পরে আগস্ট মাসে পুতুলের বিয়ে ঠিক হয়। আম্মা হঠাৎ খবর দেন যে, তোমরা একটু আসো। বিয়েতে আড়ম্বর হয়নি। আমিই পুতুলকে গায়ে হলুদ দিয়েছি এবং মেহেদি মেখে দিয়েছি। জিয়ার সাথে ওকে বেশ মানিয়েছিল।
বিয়ের পর জিয়া অবসর পেলেই খালেদা জিয়াকে নিয়ে বেড়াতেন। একবার তারা বড় বোন খুরশীদ জাহান হকের খালিশপুরের বাসায় বেড়াতে যান। খুরশীদ জাহানের স্বামী মোজাম্মেল হক খালিশপুর নিউজপ্রিন্ট মিলের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
১৯৬৫ সালে জিয়া খালেদা জিয়াকে নিয়ে পাকিস্তান চলে যান। সেখানে তার পোস্টিং হয়। সে সময় পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তারা পাকিস্তানেই ছিলেন। জিয়া যুদ্ধে অংশও নিয়েছিলেন। তিনি খেমকারান রণাঙ্গনের ‘বেদীয়ান’-এ যুদ্ধরত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাট্যালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। তার কোম্পানির নাম ছিল আলফা কোম্পানি। সে যুদ্ধে জিয়া বীরত্ব দেখিয়েছিলেন এবং পদকও পেয়েছিলেন।
যুদ্ধের কথা জানিয়ে বেগম খুরশীদ জাহান হক আলাপচারিতায় বলেন, ওই সময় পুতুল এবং জিয়ার খবর নেয়ার জন্য আমরা প্রায়ই পাকিস্তানে ফোন করতাম। পুতুল তাদের কুশলাদি জানাত। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করতাম কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি-না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই সে ছিল দৃঢ় মনের। বলত- তোমরা অযথা ভেবো না। পাকিস্তানের বান্নো এলাকায় পুতুল থাকত। সেখানেই ১৯৬৬ সালের ২০ নভেম্বর পিনোর (তারেক রহমান) জন্ম হয়।
পাকিস্তান থেকে ফেরার স্মৃতি বর্ণনা করে বেগম তৈয়বা মজুমদার একান্ত আলাপচারিতায় জানান, পুতুল ওর শ্বশুরের খুব প্রশংসা করতো। বলতো ওর শ্বশুর ওকে খুব আদর করত। এটা কিনে দিত, ওটা কিনে দিত। ওর শাশুড়ি যে বেতারে গান করতেন তা বলত। জিয়া ও পুতুল ছিল মধুর দম্পতি। ওরা কেউ কারো সম্পর্কে কোনোদিন অভিযোগ করেনি।
১৯৬৫ সালে খালেদা জিয়া স্বামীর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমানে পাকিস্তান) যান। ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত করাচিতে স্বামীর সাথে ছিলেন। এরপর ঢাকায় চলে আসেন। কিছুদিন জয়দেবপুর থাকার পর চট্টগ্রামে স্বামীর পোস্টিং হলে তার সাথে সেখানে এবং চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় বসবাস করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় চলে আসেন। বড় বোন খুরশীদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাক সেনারা তাকে দুই ছেলেসহ বন্দী করে। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি মুক্তি পান। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত বেগম জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও রাজনীতিতে বেগম জিয়ার উপস্থিতি ছিল না।
রাজনীতিতে বেগম জিয়া
১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আহ্বানে তিনি ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচনে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।
আন্দোলন
১৯৮৩ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়।
এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। পুনরায় শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাস হয়।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এই সংসদ ১৫ দিন স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদেরও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রবল আন্দোলন ও বহির্বিশ্বের চাপে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন।
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬ আসনে জয় লাভ করে, যা সরকার গঠনে যথেষ্ট ছিল না। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ আসন লাভ করে, তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সপ্তম সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। মহাজোটের প্রায় ২৬০টি আসনের বিপরীতে চার দলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোটসহ বাংলাদেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে।
গ্রেফতার ও কারাগার
প্রথম গ্রেফতার ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী ২ জুলাই ঢাকায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেয়ার পর থেকে মোট ৬ বার তিনি গ্রেফতার হন।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুদকের দায়ের করা মামলার অভিযোগে পুত্রসহ গ্রেফতার হন।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হবার পর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোনো মামলারই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।
ভোটারবিহীন দখলদার আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় দুদকের করা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা রায় দেয়।
সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ
১৩ নভেম্বর ২০১০ বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে বলপ্রয়োগে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি স্বেচ্ছায় বাসা ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন।
মামলা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার সাজা হয়েছিল। কারাগারে থাকাবস্থায় খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। আওয়ামী লীগ আমলে তাকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বিএনপি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার আবেদন জানানো হলেও তাতে সরকার সাড়া দেয়নি।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের আগস্টে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তাকে সীমিত পরিসরে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা গেছে। সবশেষ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে উঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। পরে শ্বাসকষ্ট হলে ২২ নভেম্বর তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া হয়।
৯০ দশক থেকে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের রাজনীতি খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে ঘিরে আবর্তিত হয়। বয়স ও অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা গেলেও, খালেদা জিয়াকে আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষই সম্মানের চোখে দেখেছে।
দলের ভেতরে বিএনপি তাকে রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবেই সামনে এনেছে সব সময়। সবশেষ নভেম্বরের শুরুতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন ঘোষণা করা হলে খালেদা জিয়াকে তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি।



