বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সাথে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর বনানীতে হোটেল সেরিনায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সফররত কমনওয়েলথ ‘ইলেকটোরাল সাপোর্ট’ শাখা উপদেষ্টা ও ‘প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট’ প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন হায়দার, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে কমনওয়েলথ ডেলিগেশন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে দেখা করতে এসেছে। মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে কিভাবে এই নির্বাচনের দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারি এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়াটি কেমন হবে এবং কতটা নিরপেক্ষভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে— এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ধারণাটি এক সময় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেটি জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা হিসেবে রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে, সেই আদলে নির্বাচন হলে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। তাই কেয়ারটেকার সরকারের আদলে নির্বাচন হলে, সেটি স্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধহীনভাবে সম্পন্ন করা যাবে— এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
‘কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দল নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নির্বাচন-পরবর্তী গণতান্ত্রিক উত্তরণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং বা সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আলোচনা হয়েছে,’ জানান তিনি।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছিল এই সনদ কিভাবে কার্যকর হবে। আমরা বলেছি, জুলাই সনদে সকলের সমর্থন আছে। যেসব দলের ভিন্নমত বা নোট অফ ডিসেন্ট আছে, তা প্রকাশ্য থাকবে— জনগণ তা জানবে। আগামী সংসদে যে দল ম্যান্ডেট পাবে, তারা ঐকমত্যের অংশগুলো বাস্তবায়ন করবে। আর যেখানে মতভেদ রয়েছে, তা তারা তাদের নীতিমালা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবে।’
‘নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের সময় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের আওতায় থাকতে হবে। কমিশনের মতামত ও সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।’
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত তারা রুটিন কাজ চালাবে। এ বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, “আমরা ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ বলিনি, বলেছি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে’। এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্যই হলো আস্থার সংকট দূর করা। বর্তমানে শুধু বিএনপি নয়, অন্যান্য অনেক দলও সরকারের ভেতরের কিছু কার্যক্রম ও ব্যক্তিকে ঘিরে আস্থার সংকটের কথা বলছে। যেখানে আস্থার সংকট থাকবে, সেখানে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই বলা হচ্ছে, কেয়ারটেকার সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালিত না হলে আস্থার সংকট আরো বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকারের কাঠামোয় যেমনভাবে নির্বাচন পরিচালিত হয়েছিল— সরকার শুধু দৈনন্দিন কাজ করবে, আর নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কোনো কাজ করা যাবে না— ঠিক সেই নীতিই মানতে হবে।’
গুলশানে বিএনপির চলমান বৈঠক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা খুবই স্পষ্ট— গণতন্ত্রের জন্য আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে লড়াই করেছি, নেতাকর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা সংগ্রাম করছি, তা যেন আমাদের আগামীর কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়— এই বার্তাই তিনি দিয়েছেন।’



