গণতন্ত্রে উত্তরণের যাত্রাপথ ঝুঁকিমুক্ত নয় : তারেক রহমান

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

অনলাইন প্রতিবেদক
বক্তব্য রাখছেন তারেক রহমান
বক্তব্য রাখছেন তারেক রহমান |নয়া দিগন্ত

জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সংসদ এবং সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রে উত্তরণের যাত্রাপথ ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণও কংশরূপী এক ফ্যাসিস্টের দুঃশাসন অত্যাচার-নির্যাতন দেখেছেন। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে কংশরূপী ফ্যাসিস্টের কবল থেকে এই বাংলাদেশ এবং দেশের গণতান্ত্রিকামী মানুষ মুক্ত হয়েছে। এই স্বৈরাচারের পতনের পর দেশে এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সংসদ এবং সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রে উত্তরণের যাত্রাপথ কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমরা খেয়াল করে দেখছি, এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য-মন্তব্য কিংবা নিত্যনতুন শর্ত বা শর্তের প্রস্তাবনা সামগ্রিকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, “আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে, এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির বিজয়ের ঠেকানোর মতো অন্তর্ঘাতী অপরাজনীতি চালু করেছিল, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকেও গত ১৬ বছর ধ্বংস করে দিয়েছিল। লোকাল ইলেকশন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় একই অবস্থা হয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এবার ক্ষমতাসীন সরকার নয় বরং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সহযোদ্ধা কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণেও সেই পলাতক স্বৈরাচার সরকারের মতো ‘বিএনপির বিজয় ঠেকাও’ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”

‘বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপরাজনীতি করতে গিয়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশকে একটি তাঁবেদারী রাষ্ট্রে, একটি বিশাল বড় জেলখানায় পরিণত করেছিল। বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও যারা মনে করছেন, নির্বাচন দিলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে। যারা এই চিন্তা থেকে বিএনপির বিজয় ঠেকানোর জন্য নানা রকম অপকৌশলের বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করুন। জনগণের শক্তির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ দিয়েই থাকে, সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায় প্রদানের পথরুদ্ধ করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আমিও এর আগে সংক্ষেপে কিছু কথা তুলে ধরেছি। আজ আবারো সংক্ষেপে আপনাদের সামনে কিছু কথা দুই একটি কথা এ ব্যাপারে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমরা জানি, বিশ্বের অনেক দেশেই হয়তো নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য এখনো উপযোগী নয় বলেই আমরা কম-বেশি মনে করি। কাকে কিংবা কোন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানো হচ্ছে, অবশ্যই জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হচ্ছে, জনগণের সেটি জানার পরিষ্কার কোনো সুযোগ নেই। যে কারণে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বা যেকোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জাতীয় সংসদে কিংবা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। অবশ্যই তাদেরকে জনগণের মুখোমুখী হয়ে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে জনগণের রায় অর্জন করা জরুরি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এবং আরো দুয়েকটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে। এ ধরনের ভিন্নমত এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি ইস্যুই সময়ের সাথে সাথে সুন্দরভাবে সমাধান হয়ে যাবে বা সমাধান করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ইনশাআল্লাহ। যারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলেটে করার অপচেষ্টা করছেন, এর মাধ্যমে আপনারা হয়তো নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছেন। একইসাথে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথও হয়তোবা সুগম হচ্ছে। যদি আমরা গণতন্ত্র উত্তোরণের পথে শর্তের পর শর্ত আরোপ করতে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় পরিচয়কে কেউ যাতে নিজেদের হীন ও দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদের সকলকে সতর্ক থাকার বিনীত আহ্বান জানাই। আমরা দেখেছি অতীতে বিভিন্ন সময় দেশে যারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বিবেচনা করেন। সেই সম্প্রদায়ের উপর কিংবা তাদের ধর্মীয় স্থাপনা অথবা বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এবং এই ঘটনাগুলোকে যদি আমরা পর্যালোচনা করে দেখি, তবে দেখবেন দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ হামলার ঘটনা কোনো ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং আমরা দেখেছি প্রতিটি ঘটনা নির্ভিকভাবে তদন্ত করলে দেখা যাবে অধিকাংশ হামলার ঘটনার নেপথ্য ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অথবা অবৈধ লোভ-লাভের আশা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি বিশ্বাস করে, দল-মত, ধর্ম-দর্শন যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার কিন্তু নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার।’