নির্বাচনী ইতিহাস

১৮ তে ১৮ : পরাজয় নেই খালেদা জিয়ার

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে ১৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৮বারই জয়ী হয়েছেন; ২০২৬ সালের নির্বাচনে তিন আসনে লড়াই করে তার প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করছে।

অসীম আল ইমরান
বেগম খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া |ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আসনগুলো পরবর্তীতে দলের জন্য ‘সুরক্ষিত দুর্গে’ পরিণত হয়েছে, আর ভোটারদের চোখে এসব আসন হয়ে উঠেছে ‘সরকার পরিবর্তনের প্রতীক’।

তিন দশক-জুড়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১৮টি আসন ধারাবাহিক সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাই নয়, দলের জন্য এসব আসনের গুরুত্বও তুলে ধরে। ২০২৬ সালের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবারো তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। ফেনী-১ বাবার বাড়ির আসন, যেখানে তার ধারাবাহিক জয় রয়েছে। বগুড়া-৭ শ্বশুরবাড়ির আসন, এখানেও তার জয়ের রেকর্ড রয়েছে। দিনাজপুর-৩ জন্মস্থানের আসন, এবারই প্রথম এই আসনে তিনি নির্বাচন করছেন।

ইতোমধ্যে বগুড়া সদর-৬ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বগুড়া-৭ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ধানের শীষে ভোট চেয়ে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা লিফলেট বিতরণসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে নতুন স্লোগান- ‘পুত্রবধূ খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া বগুড়া থেকে নির্বাচন করবেন, এটি এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ সময় কারা নির্যাতিত হতে হয়েছে। ১৬ বছর পর নির্বাচনের মাঠে আমাদের দলের প্রিয় দুই নেতা-নেত্রীকে পেয়েছি। দেশে নির্বাচনী হাওয়া চলছে, বগুড়া থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমরা বিপুল পরিমাণ ভোট দিয়ে ভূমিধস বিজয় নিশ্চিত করব।

নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার অতীত রেকর্ড
১৯৯১ : ঐতিহাসিক বিজয়ের সূচনা। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালের ঐতিহাসিক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮। পাঁচটি আসনেই তিনি জয়ী হন। ফেনী-১ আসনটি প্রতিনিধিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন এবং বাকি চারটি আসন ছেড়ে দেন।

১৯৯৬ : ধারাবাহিকতার জয়। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসনে লড়াই করেন। বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১। সবকটি আসনে তিনি জয়লাভ করেন। ফেনী-১ আসনটি নিজের জন্য রাখেন। বাকিগুলো ছেড়ে দেন।

২০০১ : টানা তৃতীয় সাফল্য। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনেও একই পাঁচটি আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১। সবকটি আসনে নিরঙ্কুশ বিজয়। বগুড়া-৬ আসনটি নিজের জন্য রাখেন।

২০০৮ : আইন পরিবর্তন ও নতুন রেকর্ড। ২০০৮ সালে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিধান চালু হয়। সে নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে লড়েন। বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১। তিনটি আসনেই জয়লাভ। ফেনী-১ আসনটি নিজের জন্য রাখেন।

২০১৪ সালে ভোট বর্জনের কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কথিত দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দী থাকায় তিনি ভোট করতে পারেননি। আর ২৪-এর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২৬-এর নির্বাচন কেবল প্রত্যাবর্তন নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চেতনার পুনর্জাগরণের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া।