জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মহাসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ভোটারদের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে যারা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন, তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তারা অপেক্ষা করছেন; বাংলাদেশকে যারা নতুন রাজনীতি উপহার দিতে পারবে, জনগণ তাদেরকেই ভোট দেবে।
রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল রেপ্রেজেন্টেটিভ কনফারেন্স-২০২৫’-এ তিনি বলেন, ‘জনতা তাদের ভোট দেবেন যারা দেশের জন্য নতুন ধরনের রাজনীতি উপস্থাপন করতে পারবে।’
আখতার বলেন, এনসিপি ও ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ মানুষদের কাছে নতুন রাজনীতির বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। অনেকেই সৎ, নীতি-ভিত্তিক রাজনীতি ও পুরনো বিভাজন পেরিয়ে যাবে এমন বিকল্পের অপেক্ষায় আছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, এবি পার্টি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাথে মিলে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে যাত্রা শুরু করেছি। অনেকে ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলাতে চাইছেন। কিন্তু আমরা মনে করি শুধু ভোটের হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আমাদের লক্ষ্য নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার সাথে মিল রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নেয়া।
আখতার বলেন, ‘দেশের ভোটারদের অনেকেই এখনো ঠিক করেননি তারা ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে কোন দল বা প্রতীকে ভোট দেবেন। পুরনো দলগুলোর দীর্ঘসময়ের সমর্থকরা তাদের দলকে ভোট দেবেন। কিন্তু বড় অংশই সাধারণ মানুষ; তারা পুরনো নিয়মের বাইরে নতুন ঘরানার রাজনীতি চান।’
তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, একমাত্র অ্যাজেন্ডা হওয়ার কথা ছিল সংস্কার। কিন্তু নানাভাবে এই নির্বাচনটাকে একটি শোডাউনের নির্বাচনে পরিণত করা হয়েছে। আগের বছরগুলোতে ফ্যাসিস্ট কাঠামোর বিরুদ্ধে যারা লড়েছেন, তারা এই নির্বাচনে রাজনৈতিক কাঠামো নতুনভাবে গড়ার আশা করেছেন; বিদ্যমান কাঠামোকে পুনর্বিন্যস্ত করার জন্য নয়।’
কিন্তু নির্বাচন এখন যেন দু’পক্ষের লড়াইয়ে পরিণত হচ্ছে। একদল বলছে তারা অভিজ্ঞ, অন্যটি নিজেদের নতুন বলে দাবি করছে। যদিও এর আগেও তাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির নজির রয়েছে, বলেও যোগ করেন এনসিপি মহাসচিব।
আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এখন মূল প্রশ্ন হল— কীভাবে নীতি কেন্দ্রিক রাজনীতি গড়ে তোলা যায়; কীভাবে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, যুবক, নারীসহ সব ধর্মের মানুষের ক্ষমতায়ন করা যায় এবং কীভাবে সত্যিকারের স্বনির্ভর দেশ গড়ে তোলা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতা দখলের ভোটারদের কথা দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের একটি অংশ হচ্ছে গণভোট। এর মধ্য দিয়ে মানুষ জানাবে, জুলাই সনদ ও পরবর্তী সংস্কার নির্দেশনায় কতটা সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কতটুকু করতে হবে।’
বিভাজনমূলক ‘দ্বিপক্ষীয় রাজনীতি’কে প্রত্যাখ্যান করে যারা দেশকে স্বৈরাচারী কাঠামো থেকে বের করে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে, সেসব ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। এনসিপি ও কয়েকজন নিবেদিত ব্যক্তি সংস্কারের রাজনীতিকে জীবিত রেখেছে বলেও দাবি করেন।
এনসিপির শীর্ষ নেতা বলেন, স্পষ্ট করে বলতে চাই, ক্ষমতা কারা পাবে বা পাবে না—এসব জরিপের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে দূরে সরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ঐক্য বজায় রেখে নতুন রাজনীতির বার্তা দেশের সর্বত্র পৌঁছে দিতে জাতীয় যুব শক্তির নেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান আখতার। ২০২৪ সালের গণঅভুত্থানের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে রাজপথে নামা যুবকদের কখনো ভয় বা প্রলোভনে বিভ্রান্ত করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন যুব শক্তি সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মো: তারিকুল ইসলাম। আরো বক্তব্য দেন এনসিপি প্রধান সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, যুব শক্তি সদস্য সচিব ড. জাহিদুল ইসলাম এবং প্রধান আয়োজক ইঞ্জিনিয়ার ফারহাদ সোহেল। বাসস



