মানুষের তৈরি আইন দিয়ে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না, বরং আল্লাহর দেয়া আইনই পারে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এমন মন্তব্য করেছেন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলায় খালাসপ্রাপ্ত জামায়েত ইসলামির নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
আজহারুল ইসলাম বলেন, "আমি ১৪ বছর জালেম সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলাম, আমাকে ফাঁসির কাছে ঝোলানোর সব আয়োজন করা হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেঁচে ফিরেছি। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবী ভাইদের রক্ত, ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে দেশ নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছে, আর আমিও বাংলাদেশের কারাগার থেকে মুক্ত আকাশে আপনাদের সামনে হাজির হতে পেরেছি।"
আজহারুল ইসলাম বলেন, "জুডিশিয়াল কিলিং-এর মাধ্যমে আমাদের ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, আমাকেও হত্যার আয়োজন করা হয়েছিল।"
তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান, কারাগারে শহীদ হওয়া ১০ জন ভাইয়ের (পাঁচজন ফাঁসির মঞ্চে এবং পাঁচজন বিনা চিকিৎসায়) হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করতে হবে এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
শহীদদের বিষয় উল্লেখ করে আজহারুল ইসলাম বলেন, "তারা বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েমের আন্দোলন করছিলেন, বাংলাদেশের আধিপত্য শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষার আন্দোলন করেছিলেন এবং শোষণ, জুলুম, নির্যাতনের হাত থেকে ১৮ কোটি মানুষকে মুক্তির আন্দোলন করেছিলেন। এটাই ছিল তাদের অপরাধ।"
তিনি বলেন, "ফাঁসির মাধ্যমে তারা মনে করেছিল বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে, নিশ্চিহ্ন করা যাবে। কিন্তু আজকে সাড়ে চার বছর পর এই লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ প্রমাণ করে যে, ইসলামী আন্দোলনকে হত্যা বা নির্যাতন করে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। বরং ইসলামী আন্দোলন একটি খরস্রোতা নদীর মতো; কোনো বাঁধই একে আটকাতে পারে না।"
তিনি বলেন, মীর কাসিম আলী সাহেব বিদেশে থেকেও দেশে ফিরে এসে ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন, কিন্তু জামায়াতের নেতারা পালিয়ে যাননি, বরং যারা দেশের বাইরে তাদের ঠিকানা ছিল, তারাই পালিয়ে গেছেন।
আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশের ৫৪ বছরের শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, "এই ৫৪ বছরে বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় নাই, জনগণের নেতার পরিবর্তন হয়েছে, তাদের অনেক বাড়ি-গাড়ি হয়েছে, কিন্তু জনতার পরিবর্তন হয় নাই।"
তিনি বলেন, মানুষের তৈরি আইন দিয়ে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না, বরং আল্লাহর দেয়া আইনই পারে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে।
তিনি ঘোষণা করেন, "আগামী দিনে আমাদের স্লোগান হবে : আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই।"
জামায়াতে ইসলামী সৎ লোক তৈরির চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের (জামায়াতের) মন্ত্রীরা বিগত পাঁচ বছরের শাসনে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ দেননি। এই ধরনের সৎ লোকেরাই যদি আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে এবং সংসদে আল্লাহর আইন পাশ করে, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রচলিত অর্থে কোনো রাজনৈতিক দল নয়, প্রচলিত অর্থে কোনো ধর্মীয় দলও নয়। আমাদের জামাত ইসলামী পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন, ইসলামের বাইরে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মানবিক সমাজ গঠন করতে চাই, যা কেবল আল্লাহর আইন দ্বারাই সম্ভব।"